• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
খালিস্তান বিতর্কে দ্বন্দ্ব

‘বাণিজ্য মিশন’ স্থগিত করল ভারত-কানাডা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩, ০২:৩২ পিএম
‘বাণিজ্য মিশন’ স্থগিত করল ভারত-কানাডা

ভারতীয় উপমহাদেশের শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য কথিত পৃথক রাষ্ট্র খালিস্তান বিতর্ক নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ‘বাণিজ্য মিশন’ নামের বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত ও কানাডা।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুই দেশের কর্মকর্তারা নিজ নিজ সরকারের পক্ষে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মেরি এনজির মুখপাত্র শান্তি কনসেনটিনো বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য মিশন স্থগিত করছি। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রীর ভারত সফরও মুলতবি করা হয়েছে।”

এদিকে শান্তি কনসেনটিনোর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে একই তথ্য জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত মে মাসে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মেরি এনজি এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পীযূষ গয়াল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছিলেন, চলতি ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই স্বাক্ষরিত হবে ‘বাণিজ্য মিশন’।

২০১০ সাল থেকে নিজেদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আওতা বাড়ানো এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে একটি চুক্তি করা নিয়ে কানাডা ও ভারতের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। তারপর দীর্ঘ এক দশক অবশ্য সেই আলোচনায় তেমন গতি পরিলক্ষিত হয়নি; তবে গত দু-তিন বছর ধরে ফের শুরু হয়েছে এ সম্পর্কিত আলোচনা।

গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি-২০ জোটের সম্মেলন। জোটের অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এসেছিলেন বিশ্বের প্রধান এই অর্থনৈতিক জোটের সম্মেলনে।

কানাডার সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা আশা করেছিলেন, জি-২০ সম্মেলনের অবসরে জাস্টিন ট্রুডোকে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আমন্ত্রণ জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে সম্ভাব্য সেই চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা হবে। তারপর অক্টোবরে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মেরি এনজি ভারত সফরে যাবেন এবং সেই সফরে স্বাক্ষরিত হবে বাণিজ্য মিশন।

কিন্তু সম্মেলনে পর্যাপ্ত অবকাশ ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ট্রুডোকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আমন্ত্রণ জানাননি মোদি। উপরন্তু ট্রুডোর সঙ্গে একান্তে কথা বলার সময় তিনি কানাডার খালিস্তানপন্থী শিখদের আন্দোলন নিয়ে ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

‘খালিস্তান’ নামটি এসেছে পাঞ্জাবি ভাষার শব্দ ‘খালসা’ থেকে, যার অর্থ ‘পবিত্র’। তাই খালিস্তান শব্দটির আক্ষরিক বাংলা অনুবাদ ‘পবিত্র ভূমি’। ১৬৯৯ সালে শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগুরু গোবিন্দ সিং প্রথম শিখদের জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্রের দাবি তোলেন। সেই রাষ্ট্রের নাম তিনি দেন খালিস্তান।

গোবিন্দ সিংয়ের প্রস্তাবিত সেই রাষ্ট্রের সীমানা ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত। এই এলাকার মধ্যে পড়া তিনটি অঞ্চল—অখণ্ড পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লি নিয়ে খালিস্তান গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

ব্রিটিশ শাসনামলে কংগ্রেস-মুসলিম লীগের পাশাপাশি শিখরাও খালিস্তানের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। সেই আন্দোলন সফল হয়নি। তবে গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ভারতে তীব্র হয়ে ওঠে খালিস্তান আন্দোলন। এমনকি এই আন্দোলনের জেরে নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে ১৯৮৪ সালে খুন হতে হয় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে।

Link copied!