সাতক্ষীরায় আমন মৌসুমে সরকারি চাল না ক্রয় করে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে। সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দের ৩৯ মেট্রিকটন (মে. টন) চাল ক্রয়ে নয় ছয় করেছেন তিনি। গুদামে চাল নেই অথচ খাতাখতিয়ানে ক্রয় দেখানো হয়েছে। প্রতি কেজি চাল ক্রয় ৪০ টাকা হিসেবে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন এই গুদাম কর্মকর্তা। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা খাদ্য অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আমন মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯১৯ মে. টন। এর মধ্যে নকিপুর খাদ্য গুদামে নির্ধারিত হয় ৩৫০ মে. টন ধান। তার মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে ২০১ মে. টন। নকিপুর গুদামে প্রথম ধাপে চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮৮০ মে. টন। পরে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় আরও ৩৯ মে. টন। খাতাখতিয়ানে চাল মোট সংগ্রহ হয়েছে ৭৮ দশমিক ৮৮০ মে. টন। ২৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) শেষ হয়েছে আমন সংগ্রহ মৌসুমের সংগ্রহ মেয়াদকাল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নকিপুর খাদ্য গুদামে অতিরিক্ত বরাদ্দের ৩৯ মে. টন চাউল না কিনেই সংশ্লিষ্ট মিলারকে বিল প্রদান করেছেন নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়। কাগজপত্রে ক্রয় দেখানো হলেও সরকারি এই চাউলের মজুদ নেই গুদামে। খাতপত্রে সংগ্রহ ও বাস্তবে গুদামে সংগ্রহ দেখলেই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে। এছাড়া এই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদকসেবন, ১০ টাকার চাউল ওজনে কম ও নিম্নমানের চাল দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
চাল না কিনে বিল দেওয়ায় গুদাম কর্মকর্তার সুবিধা ব্যাখ্যা করে তথ্য প্রদানকারী ওই গুদাম অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৩৯ মে. টন চাল অর্থাৎ ৩৯ হাজার কেজি চাল। প্রতি কেজি ৪০ টাকা হিসেবে এই চালের মূল্য ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৩৯ মে. টন চাল ক্রয় দেখানো মিলারকে প্রতিকেজি চালের জন্য দুই টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এতে ওই মিলার চাল না দিয়েও পেয়েছেন ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া গুদাম কর্মকর্তা বাকি টাকা নিজের কাছে অথবা ওই মিলারের কাছেই রেখেছেন।
চাল না কিনে সরকারি খাতায় হিসাব মিলবে কিভাবে প্রশ্নে তিনি জানান, এই চাল আদৌ কখনো কেনা হবে না। তবে কাগজপত্রে সমন্বয় হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (টিআর, কাবিখা) ডিওধারীরা সাধারণত চাল নেন না। তারা নগদ টাকা নেন। তখন ডিওধারীদের কাছ থেকে ডিও অর্থাৎ চাল কিনে নিবেন গুদাম কর্মকর্তা। সেখানে প্রতি কেজি চালের জন্য ডিওধারীদের ১০-১৫ টাকা কম দিবেন। এতে প্রতি কেজি চালে গুদাম কর্মকর্তার লাভ থাকবে ১০-১৫ টাকা। সেই হিসেবে ৩৯ মে. টন চালে গুদাম কর্মকর্তার ব্যবসা হবে ১০ টাকা হিসেবে ৩ লাখ ৯০ হাজার। ১৫ টাকা হিসেবে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এভাবে সরকারি হিসাব ও খাতাখতিয়ানে মিলে যাবে।
চাউল না কিনেই বিল প্রদানের বিষয়ে নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় বলেন, “এই অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়। আমি চাল ক্রয় করেছি। যদি কেউ তথ্য দিয়ে থাকেন তবে সঠিক তথ্য দেননি। এছাড়া মাদকের যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সেটিও সঠিক নয়। এটি সংরক্ষিত এলাকা। তাছাড়া চাল ওজনে কম ও নিম্নমানের দেওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়। বাইরের মানুষ অনেকে বিভিন্ন রকম অভিযোগ করেন।”
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তার ফোনকলটি রিসিভ করেননি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন বলেন, “আমি শ্যামনগর উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। চাউল না কিনেই বিল দেওয়া হয়েছে ঘটনাটি আমি জানি না। তবে অভিযোগটি পেলাম ঘটনাটি তদন্ত করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য কর্মকর্তা প্রিয় কমল চাকমা বলেন, “এখনই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগটি সঠিক হলে গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”