আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপের ফাঁসিসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে আবারও মানববন্ধন করেছে ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিতদের পরিবার।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে টেকনাফের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। সেখানে ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা জানান, ওসি প্রদীপের ইয়াবা কারবারসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে ছয়টি মিথ্যা মামলা করা হয়। ওসি প্রদীপসহ এ মামলার সব আসামির ফাঁসির দাবি করেন তিনি।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের স্বজনরা বলেন, “প্রদীপ আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
এদিকে আজ মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সোমবার সকাল থেকে আদালত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতসংলগ্ন এলাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, “সকাল থেকে পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি আমাদের নারী পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সিনহা হত্যার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”
এর আগে ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। পরে ৩১ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ফরিদুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে ১৫ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর ওই বছরের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় আসামি করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ২৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া শেষ হয় গত ১ ডিসেম্বর। এ মামলায় মোট ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।