মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার দুটি শাখার ছয় ছাত্রলীগের নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য জেলা ছাত্রলীগ বরাবর সুপারিশ করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও ইমন সরদার, উপসমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক সোহাগ শরিফ এবং নিজামকান্দি ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহাগ মোল্যা।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজাদ হোসেন মৃধা। এর আগে বিকেলে কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আজাদ হোসেন মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক মাসুম শেখ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয় ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাশিয়ানী উপজেলা শাখার এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে সংগঠন নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় উপরোক্তদের সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। সেই সঙ্গে তাদের স্থায়ীভাবে বহিস্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গোপালগঞ্জ জেলা শাখা বরাবর সুপারিশ করা হলো।
কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আজাদ হোসেন মৃধা বলেন, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন দুইটি ইউনিটের ৬ জন নেতা। এতে তারা আদর্শ পরিপন্থী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। যে কারণে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম শেখ বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানানো ছাড়াও ওই ছয় নেতার বিরুদ্ধে নানা সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বহিষ্কার হওয়ার পর ক্ষোভ ঝেড়ে ফেসবুক আরেকটি পোস্ট করে সোহাগ শরীফ। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমাকে কাশিয়ানী থানা ছাত্রলীগের আমার উক্ত পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একজন মুসলিম হয়ে আরেক মুসলিম মারা গেলে তার মৃত্যুর খবর শুনে ইন্না-লিল্লাহ পড়া এবং তার জন্য দোয়া করা কি অপরাধ? ছাত্রলীগের বহিষ্কারের কোন শর্তে লেখা আছে যে মৃত ব্যক্তির পরকালের জন্য দোয়া করলে সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা হবে এবং তাকে বহিষ্কার করা হবে? মৃত ব্যক্তি নিয়ে রাজনীতি করা কতটা যৌক্তিক? একটা কথা মনে রাখবেন ধর্মের থেকে রাজনীতি বড় নয়। আজ আমি আপনি রাজনীতির কারণে ছাত্রলীগে আছি, কাল যুবলীগ এরপর আওয়ামী লীগ এভাবে দলের পরিবর্তন হবে। কিন্তু ধর্ম তো একটাই আমার ইসলাম। ইসলাম ধর্মে জন্ম নিয়েছি আর ইনশা আল্লাহ ইসলাম ধর্মে থেকেই মারা যাব।”
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, “আমাদের বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে যদি তোমার শত্রুরও মৃত্যুর খবর পাও তবে তার জন্য দোয়া কর। রাজনীতিতে এসে যদি ইসলামের পক্ষে কথা বলতে না পারি, তাহলে এই রাজনীতি দিয়ে কী করব। তবে যত দিন আছি দেশের মানুষের জন্য নিজ থেকে যতটুকু পারি কাজ করে যাব ইনশা আল্লাহ। সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ।”