বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে বরিশাল নগরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে রূপাতলী এলাকায় কয়েকটি বাসে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদারের নেতৃত্বে নগরের রূপাতলী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের হয়।
মিছিল শেষে যানবাহন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন নেতা-কর্মীরা। এতে বেশ কয়েকটি যানবাহনের কাঁচ ভেঙে যায়। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নেতাকর্মীরা।
এর আগে, বুধবার রাতে নগরের সিঅ্যান্ড রোডে ঢাকা-বরিশাল মহসড়কে মশালমিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। কাশিপুর এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
এছাড়া সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেন। নগরের সোনালী আইসক্রিম মোড়ের বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এসব ঘটনায় চারজনকে আটক করে পুলিশ।
আটকরা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য মোনায়েম খান, সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. মহসিন ও একই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মাসুদ এবং একজন কর্মী (নাম–পরিচয় জানা যায়নি)।
এদিকে গতকাল অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভের চেষ্টাকালে আটকের ঘটনায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খোকন চন্দ্র দে বাদী হয়ে মামলটি করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার, সদস্য আবু মুসা কাজল, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব সাব্বির আলী শেখ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসচিব হানিফ হাওলাদার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক দ্বীন ইসলাম, মোহাম্মদ আনিস, সদস্য শামসুল আলম, মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস হাওলাদার, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সাকলাইন মোস্তফা, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য রেজাউল রহমান, কাজী মোহাম্মদ ফিরোজ, ১১ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সদস্য মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য রাশেদুজ্জামান খান।
এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যান চলাচল বেড়েছে। সকাল থেকে ছেড়ে গেছে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ। এছাড়া বেলা ১১টার দিকে নগরে মোটরসাইকেল মহড়া দেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. জাহিদুর রহমান বলেন, সরকার দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এরপরও বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানা কৌশলে মাঠে আছেন। ইতিমধ্যে অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সড়কে যান চলাচলে বাধা দেওয়াসহ নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ দেখে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে চারজনকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রূপাতলীতে আজ দুপুরে একটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।