• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে কবে


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২, ১২:০৪ পিএম
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে কবে

একা বা দুজন দ্রুত কোথাও যেতে চাইলে দুই চাকার মোটরসাইকেল প্রথম পছন্দ। যাদের ব্যক্তিগত চার চাকার গাড়ি আছে, তাদের কথা বলছি না। এ ছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেলের চাহিদাই বেশি। এমনকি ইদানীং মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। সহজ ও ঝামেলামুক্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে এর জুড়ি নেই। যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে মোটরসাইকেল, ঠিক তখনই একটি নিষেধাজ্ঞা বাইকপ্রেমীদের বুকে যেন কুঠারাঘাত করেছে। এর পেছনে অবশ্য নিয়ন্ত্রণহীন চালকের অদূরদর্শিতাও দায়ী। তবে তার জন্য সুষ্ঠু ও সহজ-গ্রহণযোগ্য সমাধান কাম্য।  

আমরা জানি, পদ্মা সেতুর ওপর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হয়েছিলেন। তাই ঈদুল আজহার আগে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। চলতি বছরের ৩ জুন মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতুতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা বসবে, স্পিড গানও বসানো হচ্ছে। এগুলো বসলে তারপর সুবিধা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব কবে বসবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। ফলে সেই সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। গত ছয় মাসেও কোনো সমাধান আসেনি।

গত ৭ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেলে চেপে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু পার হওয়ার সুযোগ দেওয়ার চিন্তা সরকারের আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে তিনি এ কথা বলেছিলেন। সেতুমন্ত্রী আরও বলেছেন, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালুর বিষয়ে প্রথমে আমাদের কোনো নিষেধ ছিল না। কিন্তু সেখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে। যে সমস্যার জন্য পদ্মা সেতুই চলের অনুপোযোগী হয়ে যায়, এমনভাবে ছোটে সবাই।

আমার অনেক বন্ধু ও আত্মীয়কে দেখেছি বাইকে নিয়মিত অফিস করতে। যেকোনো ছুটি বা উৎসবে বাইক নিয়ে বাড়ি যেতে। পদ্মা সেতু হওয়ার আগেও তারা ফেরিতে নদী পার হয়ে বাড়ি গেছেন। অথচ কাঙ্ক্ষিত সেতু হওয়ার পর তারা বাইক নিয়ে চিন্তিত। বাইক নিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারেননি বলে আশাহত হয়েছিলেন। তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে, বাইকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কি যৌক্তিক? যেসব কারণে এ নিষেধাজ্ঞা, সেসব সমস্যার কি সহজ সমাধান হতে পারে না? এত কালক্ষেপণ করার উদ্দেশ্য কী? তবে কি মোটরসাইকেল চালকদের অভিযোগ সত্য? পরিবহন মালিকদের খুশি করতেই কি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? বাইকের কারণে পরিবহনের যাত্রী কমে যায় বলে এমন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে? যদি তা-ই হয়, তবে তা খুবই দুঃখজনক। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে আসা উচিত। সব ধরনের নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করাই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। কারণ একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ায় বাইক চালানো বন্ধ করে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। আমরা দেখেছি, ওই বাইকের স্পিড ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই আগে স্পিড নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে মহাসড়কে আইনের প্রয়োগ করে হলেও মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।

সবচেয়ে অবাক লাগে, আমাদের দেশে মাথা ব্যথা হলে যখন মাথাই কেটে ফেলার চিন্তা করা হয়। বিষয়টি কতটা হাস্যকর, তা চিন্তা করলেও হাসি পায়। বিকল্প কিছু যেন ভাবতেই পারেন না কেউ। অথচ খুব সহজে অবশ্যই কিছু নীতিমালা আরোপ করা যায়।

যেমন—
১. প্রয়োজন ছাড়া বাইক নিয়ে বের হলে আটক বা জরিমানা করা 
২. অপ্রাপ্তবয়স্ক কারও হাতে বাইকের স্টিয়ারিং দেখলে আটক করা
৩. মহাসড়কে বাইকের স্পিড লিমিট করে দেওয়া ও মনিটরিং করা
২. দূরযাত্রায় অতিরিক্ত লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া বা রোধ করা
৩. একটি গাড়িতে পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়া
৪. বাইকের চালক ও আরোহীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এমন কিছু নীতিমালা আরোপ করে হলেও মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

বিভিন্ন সংগঠন মারফত আমরা জেনেছি, বর্তমানে দেশে ৩৭ লাখের বেশি মোটরসাইকেল রাস্তায় চলছে। গণপরিবহন সংকট, বাসমালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পদে পদে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রেলের টিকিট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটসহ নানা কারণে মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর দিন দিন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

আমরা এ-ও জেনেছি, ঝুঁকিপূর্ণ এ বাহন কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। এ কথা স্বীকার করতেও দ্বিধা নেই। যদিও যানজট কমাতে দেশে রাইড শেয়ারিং চালু করা হলেও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও মনিটরিংয়ের অভাবে এসব রাইড শেয়ারকারী যানবাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সড়কের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাহনটির নিবন্ধন বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যেকোনো বয়সী মানুষ বাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। তাই তার আগে অবশ্যই গণপরিবহন সংকট সমাধান করা, যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে আমাদের গৌরব ও অহংকারের প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের স্পিড লিমিট নির্ধারণ করে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে মোটরসাইকেল চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।

কেননা অসংখ্য মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে এমন সিদ্ধান্ত। যাতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষও দেখা গেছে। দুর্ঘটনার অজুহাতে সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। ব্যক্তিগত বাইকে অনেকেই দূর থেকে কর্মস্থলে আসেন। তারা কেন ভুগবেন। ব্যক্তিগত বা রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনেকেই বাড়ি যান, তাদের ভোগান্তিতে ফেলা অযৌক্তিক। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রণ জরুরি হলেও দমন কাম্য নয়। অদক্ষ চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে সঠিক আইনের প্রয়োগ করে চলাচলের অনুমতি দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। শুধু শুধু বাইক নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না। তাই সবার দাবি, সহজ-সুন্দর সমাধান একান্ত প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন?

লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

Link copied!