চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৬৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জন নিহত ও ৯৭৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি মাসে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত ও ৮৯৯ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৫ জন নিহত ও ১১৪ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত, ১ জন আহত ও ৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
এ ছাড়া মোট দুর্ঘটনার মধ্যে পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনাই ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে বিদায়ী এ জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তবে প্রাণহানি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ২০৬ জন চালক, ১০৯ জন পথচারী, ৩৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৩ জন শিক্ষার্থী, ১০ জন শিক্ষক, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১১৫ জন নারী, ৬২ জন শিশু, ৫ জন সাংবাদিক, ১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন আইনজীবী ও ৩ জন প্রকৌশলী এবং ১৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এ সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় মোট ৮১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বাস, ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান ও লরি, ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
দুর্ঘটনার ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ সংঘর্ষ, ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, বিবিধ কারণে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
বিদায়ী মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারি, এই দিনে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে। আর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ২ জানুয়ারি। এই দিনে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ১১ জানুয়ারি। এই দিনে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ৫ জানুয়ারি। এই দিনে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমশ বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ ছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাটবাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ।