চিত্রনায়িকা পরীমনির জীবনে গত চব্বিশ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে যা চলছে তা অনেকটা সিনেমার মতোই বলা যায়। আজ বৃহস্পতিবার রাতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকাই ছবির এই নায়িকাকে আদালতে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার সময়েও কম নাটকীয়তা হয়নি।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পরীমনিকে হাজির করা হয়। এরপর তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ান। পরীমনি এজলাসে ঢোকার পরপরই এক আইনজীবী তাকে জড়িয়ে ধরেন। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ এজলাসে ওঠেন। এরপর পরীমনির পক্ষে আদালতে লড়তে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। কে পরীমনির পক্ষে ওকালতনামা দেবেন তা নিয়ে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে যান আইনজীবীরা। একপর্যায়ে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। এ সময় আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আগে আপনারা ঠিক করুন, কে আসামির আইনজীবী হবেন। তারপর শুনানি হবে।’
আইনজীবীদের কলহ একটু শান্ত হলে পরীমনি ইশারা করে আইনজীবী নিলঞ্জনা রিফাত সৌরভিকে তার আইনজীবী নিয়োগ করেন।
রাত ৯টার কিছু আগে এজলাসে আসেন ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ। এরপর তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ।
রিমান্ড শুনানিতে অংশ নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, মামলার আসামি পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য ২ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এই মাদক কোথা থেকে এলো? তার উৎস কী? কে এই মাদক পাঠাল? মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
শুনানিতে আবদুল্লাহ আরও বলেন, সরকার যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে, সেখানে পরীমনির বাসায় সর্বনাশা মাদক পাওয়া গেছে। দেশে যারা ভদ্র মুখোশধারী রয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে এই আসামিকে (পরীমনি) তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। পরীমণির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সৌরভি রিমান্ড শুনানিতে বলেন, যে পরিমাণ মদ তার বাসায় ছিল বলা হচ্ছে সে পরিমাণ ছিলো না। তারপরেই তিনি বলেন, তার বাসা থেকে কোনও মদ পাওয়া যায়নি। তার মক্কেল চক্রান্তের শিকার।
পরীমনির আইনজীবী আরো বলেন, পরীর ক্যারিয়ার নষ্টের জন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মামলা করা হয়েছে। এরকম স্বনামধন্য নায়িকাকে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানহানি না করে জামিনের প্রার্থনা করেন আইনজীবী। তিনি শুনানিতে বলেন, তার স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে। তাকে যেকোনও জায়গায় যেকোনও সময় পাওয়া যাবে।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের পুরো সময়, প্রায় ৪০ মিনিট পরীমনি নিশ্চুপ ছিলেন। পরে তাকে আদালত থেকে বের করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে র্যাব সদরদফতর থেকে কালো একটি মাইক্রোবাসে পরীমনিকে বনানী থানায় নেয়া হয়। পরে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। বনানী থানায় র্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে।
গতকাল (বুধবার) বিকেলে পরীমনির বনানীর বাসায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে যায় র্যাবের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। তাদের দেখে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভ শুরু করেন পরীমনি। তিনি সেখানে অভিযোগ করেন, তার বাসায় ‘বিভিন্ন পোশাকে’ লোকজন এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতে বলছেন। কিন্তু তিনি দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার কথা জানায় র্যাব।
পরীমনি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছেন। কিছুদিন আগে ঢাকার সাভারের বোটক্লাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই ঘটনায় কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন, তারা আবার জামিনও পেয়েছেন। এর মধ্যেই আবার একাধিক ক্লাবে পরীমনির ভাঙচুরের অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।