বন্ধুত্ব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছোটবেলা থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সে অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়। তবে, প্রকৃত বন্ধুত্ব তো কি সবার সঙ্গে হয়? শিশু বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বড় হওয়া, কৈশোরে আবেগভিত্তিক বন্ধুত্ব, আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রয়োজন ও মানসিক সমঝোতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক—এসবের মধ্যে প্রকৃত বন্ধুত্ব কোন বয়সে গড়ে উঠে?
শৈশবে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মূলত খেলাধুলা, স্কুল, পারিবারিক পরিবেশ এবং একসঙ্গে সময় কাটানোর ভিত্তিতে। এই বন্ধুত্ব সহজ-সরল হলেও বেশিরভাগ সময় তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বয়স ও পরিবেশ বদলালে এসব সম্পর্ক দূরে সরে যায়।
কৈশোরে বন্ধুত্বে আবেগ, ভালোবাসা এবং বিশ্বাস বেশি থাকে। তবে এই বয়সে মানসিক অস্থিরতা, প্রতিযোগিতা ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যায়। কিশোর বয়সের বন্ধুরা একে অপরের জীবনে গভীর প্রভাব ফেললেও এই বন্ধুত্ব অনেক সময় বাস্তবতা টিকিয়ে রাখতে পারে না।
১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সে মানুষ জীবন অনেক পরিবর্তন হয়। উচ্চশিক্ষা, প্রেম, ক্যারিয়ার গঠন, স্বাধীনচেতা চিন্তাগুলো এই সময় মানুষের জীবন বদলে দেয়। এই বয়সে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব অনেকটা পরিণত হলেও সেখানে আবেগ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই বয়সে মানুষ অনেক ভুল-শুদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়, এবং বন্ধুরাও তার জীবনে বড় ভূমিকা রাখে। অনেকের জীবনের প্রকৃত বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয় এই সময়েই, কারণ তখন মানসিকভাবে কিছুটা পরিণত ও বাস্তবমুখী হওয়া শুরু করে।
প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মজীবনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার ভিত্তিতে। মানুষ তখন পরিবার, ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক পুরনো বন্ধু ছিটকে পড়ে। আবার নতুন কিছু মানুষ জীবনে আসে যারা একই অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। এই বয়সে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব সাধারণত আরও টেকসই হয় কারণ এখানে আবেগের পাশাপাশি বোঝাপড়া, সহানুভূতি ও সম্মান কাজ করে। প্রকৃত বন্ধু অনেকেই এই বয়সে খুঁজে পান যারা কঠিন সময়ে পাশে থাকে, পরামর্শ দেয়, সমালোচনা করে কিন্তু দূরে সরে না।
চল্লিশোর্ধ বয়সে মানুষ জীবনকে অনেকটা বুঝে ফেলে। সম্পর্কের ভেতর-বাহির বোঝার অভিজ্ঞতা হয়, এবং তখন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠলে তা হয় সত্যিই গভীর, নির্ভরযোগ্য ও মানসিকভাবে শান্তিদায়ক। এই বয়সে বন্ধুত্বে প্রতিযোগিতা থাকে না, থাকে সহানুভূতি ও একে অপরকে বোঝার প্রবণতা। বহুজন এই বয়সে প্রকৃত বন্ধুকে নতুনভাবে খুঁজে পান—হয়তো পুরনো কেউ আবার জীবনে ফিরে আসে, নয়তো কর্মক্ষেত্র বা সামাজিক পরিসরে কারও সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।
বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান বড় হয়ে দূরে চলে যায়, জীবন ধীরে হয়ে পড়ে, তখন নতুন করে বন্ধু খোঁজার প্রয়োজন পড়ে। এই বয়সে বন্ধুত্ব মানে—কারও সঙ্গে গল্প করা, স্মৃতি ভাগ করে নেওয়া, একাকীত্ব দূর করা। কেউ কেউ এই সময়েই প্রকৃত বন্ধুকে খুঁজে পান, যিনি হয়তো শুধু সঙ্গী নয়, মনের শান্তিরও উৎস হয়ে ওঠেন।
প্রকৃত বন্ধুর বয়স নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ বন্ধুত্ব নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক পরিপক্বতা, জীবনদর্শন ও অভিজ্ঞতার ওপর। সত্যিকারের বন্ধুত্ব সময়ের সঙ্গে টিকে থাকে, ভালো-মন্দে পাশে থাকে এবং স্বার্থ ছাড়িয়ে একে অপরকে বুঝতে পারে।