দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সীমিত আয় অনেক পরিবারকে আর্থিক চাপে ফেলেছে। বিশেষ করে যাদের মাসিক আয় কম। সংসার চালানো যেন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কিছু কৌশল ও সচেতনতা থাকলে অল্প টাকায়ও একটি পরিবার সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারে। প্রয়োজন শুধু পরিকল্পনা, সংযম এবং অর্থ ব্যবস্থাপনায় কৌশলী হওয়া।
মাসিক বাজেট তৈরি করুন
সংসার চালানোর প্রথম ধাপ হলো মাসিক বাজেট তৈরি করা। কী পরিমাণ আয় হচ্ছে, তা পরিষ্কারভাবে লিখে ফেলুন। এরপর বাসাভাড়া, খাবার, বিদ্যুৎ, গ্যাস, চিকিৎসা, স্কুলফি—এসব প্রয়োজনীয় খরচ নির্ধারণ করুন। অপ্রয়োজনীয় খরচ যেমন অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, বাইরে খাওয়া, বিলাসিতার খরচ বাদ দিন। নিয়মিত বাজেট মেনে চললে মাস শেষে হাত খালি হবে না।
বাজারের আগে তালিকা
অনেকেই বাজারে গিয়ে যা খুশি তাই কিনে ফেলেন, যা বাজেটের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। বাজারে যাওয়ার আগে কী কী লাগবে তা একটি তালিকায় লিখে নিন। তালিকা অনুসারে কিনুন, অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন।সপ্তাহে একবার বড় বাজার করুন। এতে সময় ও খরচ কমবে।
সাশ্রয়ী খাবারের ব্যবস্থা করুন
খাবারে সাশ্রয় করা মানেই খারাপ খাওয়া নয়, বরং পরিকল্পিত খাওয়া। মৌসুমি সবজি ও স্থানীয় খাদ্য কিনুন—এগুলো তুলনামূলক সস্তা ও পুষ্টিকর।সপ্তাহে একদিন নিরামিষ দিন রাখতে পারেন। বাসায় রান্না করা খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী। বাসি খাবার ফেলে না দিয়ে পরদিন ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসে সাশ্রয় করুন
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল কমানো গেলে মাসিক খরচ অনেকটাই হ্রাস পায়। অপ্রয়োজনীয় লাইট, ফ্যান, টিভি বন্ধ রাখুন। ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক কেটলি সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। রান্নার সময় গ্যাস অপচয় কমান—সব উপকরণ আগে থেকেই গুছিয়ে রাখলে সময় ও গ্যাস বাঁচে।
পুরনো জিনিস পুনঃব্যবহার করুন
অনেক সময় আমরা পুরনো জিনিস ফেলেই দেই, যেগুলো একটু যত্ন নিলে পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব। পুরনো জামাকাপড় রিপেয়ার করে ব্যবহার করুন।শিশুদের খেলার জিনিস বা স্কুলের জিনিস অল্প ব্যবহৃত হলে দ্বিতীয়বার কাজে লাগাতে পারেন।
ঋণ পরিহার করুন
ক্রেডিট কার্ড, চড়া সুদের ঋণ এসব অল্প টাকায় সংসার চালানো মানুষদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।অপ্রয়োজনীয় ধার বা কিস্তিতে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকুন। জরুরি কিছু কিনতে হলে আগে টাকা জমিয়ে তারপর কিনুন। প্রয়োজনে বন্ধু বা আত্মীয়র কাছ থেকে স্বল্প সুদে ধার নেওয়া যেতে পারে, তবে সময়মতো পরিশোধ করুন।
বাড়িতে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করুন
যদি পরিবারের কেউ বাড়তি সময় পান, তবে ছোটখাটো আয় করতে পারেন। ঘরে বসে টিউশনি, সেলাই, হস্তশিল্প, অনলাইন কাজ ইত্যাদি আয় করতে সহায়ক হতে পারে। ঘরের কোনো জিনিস অপ্রয়োজনীয় হলে অনলাইনে বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ জোগাড় করুন।
জরুরি হচ্ছে, অল্পতেই খুশি থাকার মানসিকতা এবং নিজের সাধ্য বুঝে জীবনযাপন করা। এতে স্থায়ী শান্তি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা পাওয়া যায়।