শিশুর জীবন একটি সাদা ক্যানভাসের মতো। যেখানে প্রথম লেখার দাগ পড়ে হাতেখড়ির মাধ্যমে। এটি শুধু শিক্ষাজীবনের সূচনাই নয়, বরং শিশুর মানসিক প্রস্তুতি, শেখার প্রতি আগ্রহ এবং পারিবারিক মূল্যবোধ গঠনের প্রথম ধাপ। তাই শিশুর হাতেখড়ি যতটা সুন্দর, সচেতন ও আনন্দদায়ক হবে, তার শিক্ষাজীবনের ভিত্তিও ততটাই মজবুত হবে।
হাতেখড়ি হলো শিশুর জীবনে প্রথমবার লেখালেখি শেখার প্রক্রিয়া। সাধারণত এটি বর্ণমালা বা ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতিতে এটি একটি পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক আচার হিসেবেও বিবেচিত হয়।
কখন শিশুর হাতেখড়ি শুরু করা উচিত?
সাধারণভাবে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে হাতেখড়ির উপযুক্ত সময়। তবে নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুর মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে কি না তা খেয়াল করা। কলম ধরার শক্তি ও নরমোটর স্কিল কতটা বিকশিত হয়েছে তা খেয়াল করা। সে শব্দ বা অক্ষর চিনতে আগ্রহী কি না দেখতে হবে। মনে রাখবেন, জোর করলে শিশু লেখালেখির প্রতি বিরক্ত বা ভীত হয়ে উঠতে পারে।
হাতেখড়ির জন্য শিশুকে প্রস্তুত করবেন যেভাবে_
শেখার প্রতি আগ্রহ জাগান
শেখা যেন খেলার মতো আনন্দদায়ক হয়। গল্পের বই, অক্ষরের কার্ড, ছবি দেখে শেখানো ইত্যাদি উপায়ে শিশুর মধ্যে শেখার আগ্রহ বাড়াতে হবে।
ভাষার সঙ্গে পরিচিত করুন
শিশুকে গান, কবিতা, ছড়া শোনান। দৈনন্দিন কাজে বাংলা বা ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করুন। দেয়ালে বড় অক্ষরের চার্ট টাঙিয়ে দিন
কলম ধরার দক্ষতা গড়ে তুলুন
শুধু লেখা শেখানোর আগেই শিশুর হাতে কলম বা খড়ি তুলে না দিয়ে প্রথমে কিছু স্কিল গড়ে তুলুন। ছবি আঁকা, পেন্সিল দিয়ে দাগ টানা, রঙ করা, বিভিন্ন জিনিস আঁকা-আঁকির মাধ্যমে অনুশীলন
হাতের কসরত বাড়ান
শিশু যেন আরাম করে লিখতে পারে, সে জন্য হাতের পেশি ও আঙুলের শক্তি বাড়াতে ছোট ছোট অনুশীলন করাতে পারেন। আটা দিয়ে খেলনা বানানো, পুতুল ধরে সাজানো, কাগজ কাটা বা ভাঁজ করা শিখতে দিন।
হাতে-কলমে হাতেখড়ির ধাপ
প্রথমে অক্ষর চেনানো
বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালা বড় অক্ষরে দেখান। শিশুর পছন্দের অক্ষর বা তার নামের অক্ষর দিয়ে শুরু করতে পারেন।
দাগ টানা ও আঁকার অনুশীলন
একটি লাইন ধরে দাগ টানা, বৃত্ত বা চতুর্ভুজ আঁকার চর্চা করতে দিন।
অক্ষর লেখার চেষ্টা
প্রথমে ডট বা পয়েন্ট দিয়ে অক্ষর আঁকতে দিন। এরপর ধীরে ধীরে পূর্ণ অক্ষর লেখার চর্চা করান।
খারাপ লেখা বা ভুল করে ফেললে বকবেন না।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় রাখুন (যেমন ১৫-২০ মিনিট)।প্রথমে রঙিন খাতা, পেন্সিল ব্যবহার করুন। প্রশংসা করুন শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়বে।