সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালকে কীভাবে সামলাবেন

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বয়ঃসন্ধিকাল বা কৈশোর এমন একটি সময়, যখন সন্তানরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই সময়টিকে ‘পরিবর্তনের সেতুবন্ধন’ বলা যায়—এটি শৈশব থেকে যৌবনে প্রবেশের প্রক্রিয়া। সাধারণত ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে এই ধাপ শুরু হয়। 

বয়ঃসন্ধিকাল শুধু শারীরিক নয়, বরং মানসিক, আবেগিক ও সামাজিক পরিবর্তনেরও সময়। এ সময় সন্তানের আচরণ, চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা অনেকটাই পাল্টে যায়। যা অনেক বাবা-মায়ের কাছেই অস্বস্তিকর ও জটিল মনে হয়। কিন্তু সচেতন ও বন্ধুত্বপূর্ণ অভিভাবকত্বই এই সময় সন্তানকে সঠিক পথে রাখতে পারে।

কেন বয়ঃসন্ধিকাল গুরুত্বপূর্ণ

এ সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে—যা আচরণে প্রভাব ফেলে। সন্তানরা আত্মপরিচয়ের খোঁজে থাকে—কে আমি, আমি কী করতে চাই। তারা স্বাধীনতা চায়, আবার কখনো সিদ্ধান্তে দ্বিধায় পড়ে। এই সময় বন্ধুদের প্রভাব বেশি পড়ে। মেজাজ চড়া, বিরক্তিভাব, হঠাৎ আবেগ বা কান্না স্বাভাবিক ব্যাপার। এই সময় সন্তানকে বোঝা ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া না হলে তারা ভুল পথে যেতে পারে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে, এমনকি হতাশাগ্রস্তও হতে পারে।

কীভাবে সন্তানকে সামলাবেন

খোলা মনে কথা বলুন

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক তৈরি করুন। এমন পরিবেশ দিন যেন সে সহজে সব কথা বলতে পারে। প্রশ্ন করলে বিরক্ত না হয়ে ধৈর্য ধরে শুনুন। তার চিন্তাধারাকে একেবারে ভুল বা ছোট করে দেখাবেন না। আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা উদাহরণ হিসেবে দিন

শারীরিক পরিবর্তনে সচেতনতা

বয়ঃসন্ধিতে শরীরের নানা পরিবর্তন হয়—যেমন কণ্ঠস্বর ভারী হওয়া, ব্রণ ওঠা, মাসিক শুরু ইত্যাদি। সন্তান যেন এসব পরিবর্তনকে ভয় না পায় বা লজ্জা না পায়, সেজন্য বয়স অনুযায়ী তাকে আগে থেকেই বোঝান। বাচ্চাদের উপযোগী ভাষায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন। স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার গুরুত্ব শেখান।

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা দিন
এ সময় সন্তান নিজের জায়গা, সময় ও স্বাধীনতা চায়। সবসময় নিয়ন্ত্রণ না করে তার কক্ষে টোকা দিয়ে ঢুকুন, তার পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করুন, 
দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় একসঙ্গে কাটান।

নিয়ম-কানুন ঠিক করুন
সন্তান যেন দায়িত্বশীল হতে শেখে, সে জন্য নিয়ম জরুরি। তবে অতিরিক্ত শাসন করলে উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। মোবাইল, ইন্টারনেট, পড়াশোনার সময় নির্ধারণ করুন। শাস্তি নয়, বরং কারণ ব্যাখ্যা করে বোঝান। ভালো কাজে উৎসাহ দিন, ভুল করলে সংশোধনের সুযোগ দিন।

বন্ধুদের খোঁজখবর রাখুন
এই বয়সে বন্ধুদের প্রভাব অনেক বেশি। তাই সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে তা জানুন।বন্ধুকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে উৎসাহ দিন।বন্ধুদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবেন না।তার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সাহায্য করুন।

পজিটিভ রোল মডেল হোন
আপনি যা বলছেন, নিজে তা মেনে চলুন। সন্তান দেখেই শেখে। আপনি যদি মিথ্যা না বলেন, সেও শিখবে, আপনি যদি ধৈর্য ধরেন, সেও ধৈর্যশীল হবে।

মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন
বয়ঃসন্ধিতে মানসিক চাপ, অবসাদ বা আত্মসমালোচনা হতে পারে। লক্ষ করুন, সন্তান খুব বেশি চুপচাপ বা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে কি না, খাওয়াদাওয়া বা ঘুমে অনিয়ম হচ্ছে কি না, প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন।

মনে রাখবেন, কঠোরতা নয়, ভালোবাসা ও বুদ্ধিমত্তাই এই সময় সন্তানকে গড়ে তোলে আত্মবিশ্বাসী, সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে।