প্রকৃতি তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি ঋতুতে, প্রতিটি ফুলের রঙে, পাতার দোলায়। প্রকৃতির বর্ণময়তায় এক অসাধারণ সংযোজন হলো কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের খরতাপে যখন প্রকৃতি রুক্ষ ও ক্লান্ত, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়া তার আগুনরঙা ফুলে প্রকৃতিকে করে তোলে প্রজ্জ্বলিত ও প্রাণবন্ত। গ্রীষ্মকালের অনন্য প্রতীক, প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক উজ্জ্বল ব্যঞ্জনা।
কৃষ্ণচূড়া একটি বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ, যা মূলত মাদাগাস্কার থেকে আগত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বহু দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে এটি খুব সহজেই বেড়ে ওঠে। কৃষ্ণচূড়ার আরেক নাম “ফ্লেম ট্রি” বা আগুন গাছ, যা তার উজ্জ্বল লাল-কমলা ফুলের জন্যই বেশ পরিচিত।
শহর বা গ্রামের রাস্তার পাশে, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ বা পার্কে কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। গ্রীষ্মে যখন অন্যান্য গাছের পাতা ঝরে যায়, তখন কৃষ্ণচূড়া একাই তার ডালে রঙিন ফুল ফুটিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
কৃষ্ণচূড়া ফোটার মৌসুম সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। এই সময়টিতে গাছের সবুজ পাতাও খুব একটা থাকে না, ফলে ফুলগুলো যেন আরও বেশি চোখে পড়ে। কৃষ্ণচূড়ার ফুলের রঙ সাধারণত উজ্জ্বল লাল বা কমলা, মাঝে মাঝে হলুদের ছোঁয়া থাকে। প্রতিটি ফুল চারটি বিস্তৃত পাঁপড়ি এবং একটি আলাদা আকৃতির পঞ্চম পাপড়ি নিয়ে গঠিত। ফুলের আকার বড় এবং এগুলো গুচ্ছবদ্ধভাবে গাছে ঝুলে থাকে। একেকটি গাছে শত শত ফুল একসাথে ফুটে গাছটিকে রক্তিম মেঘে মুড়ে দেয়।
কৃষ্ণচূড়া রোপণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। এটি প্রচুর রোদে ভালো বেড়ে ওঠে এবং বৃষ্টির পানি পেলে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হয় এবং বিশেষ পরিচর্যা ছাড়াই এটি বেশ বড় হয়ে ওঠে। কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে দেয় প্রাণের ছোঁয়া, চৈত্রের তপ্ত দুপুরেও এনে দেয় শীতল মনোভাব। এর উজ্জ্বল রঙ মানুষের মন প্রফুল্ল করে, ক্লান্ত চোখে এনে দেয় প্রশান্তি। এ ফুল শুধু প্রকৃতির নয়, কবিতা, গান ও চিত্রকলারও অনুপ্রেরণা।
বিশিষ্ট কবিরা তাদের কবিতায় কৃষ্ণচূড়ার উল্লেখ করেছেন ভালবাসা, বিরহ কিংবা রঙের প্রতীক হিসেবে। বিশেষ করে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় কৃষ্ণচূড়ার ছায়া ও রঙ যেন মানুষের এক নিঃশ্বাসে স্বস্তি দেয়।
কৃষ্ণচূড়া বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে, ধুলাবালি রোধে সহায়ক। শহরাঞ্চলে এই গাছ ধোঁয়া ও গ্যাস শোষণে সহায়ক হয় এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখে।
কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। এটি ঋতুর প্রতীক, একটি আবেগের রঙ, শান্তির রঙ। যা মনে জাগায় প্রেম, প্রাণ আর প্রশান্তি।