অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কী করবেন

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

অগ্নিকাণ্ড ভয়াবহ দুর্যোগ। যা মুহূর্তের মধ্যেই  মানুষের জীবন, সম্পদ ও স্থাপনা ধ্বংস করে দিতে পারে। অনেক সময় অবহেলা, অসচেতনতা ও নিরাপত্তাবিধি না মানার কারণেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের শহরগুলোতে, বিশেষ করে শিল্প কারখানা ও আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ড এখন নিত্যদিনের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় অগ্নিকাণ্ড রোধে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সচেতন ও প্রস্তুত থাকা জরুরি।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ
অগ্নিকাণ্ড সাধারণত বেশকিছু কারণে ঘটে। যেমন_ 
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, গ্যাস লিক করে আগুন ধরা, রান্নার সময় অসাবধানতা, তড়িৎচালিত যন্ত্রপাতির অতিরিক্ত গরম হওয়া, মোমবাতি বা ধূপকাঠির ব্যবহার শেষে নিভিয়ে না রাখা, দাহ্য পদার্থের সঞ্চয় ও ভুলভাবে সংরক্ষণ, ধূমপান শেষে জ্বলন্ত সিগারেট বা দেশলাই ফেলে দেওয়া, কারখানায় নিরাপত্তাবিধি উপেক্ষা করে আগুনের ব্যবহার করার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকাণ্ড রোধে যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে
 

বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

বাসা-বাড়ি বা অফিসে বৈদ্যুতিক তার ও যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরীক্ষা করুন। নিম্নমানের তার, প্লাগ বা মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত লোড দিয়ে একটি সকেটে একাধিক যন্ত্র চালাবেন না। সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ ব্যবস্থা রাখুন। প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ানের পরামর্শ নিন।

রান্নার সময় সতর্ক থাকুন

রান্নাঘরে শিশুদের প্রবেশ সীমিত রাখুন। গ্যাস চুলা ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালোভাবে বন্ধ করুন। রান্না করতে করতে মাঝপথে বাসা থেকে বের হবেন না। সিলিন্ডার ব্যবহারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। রান্নাঘরের পাশে আগুন নেভানোর সামগ্রী রাখুন, যেমন: বালু বা ছোট ফায়ার এক্সটিংগুইশার। এগুলো ব্যবস্থা করা জরুরি।

গ্যাস লিক রোধ ও সচেতনতা

এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ভালো মানের কিনুন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা দেখে নিন। গ্যাসের লিক হলে আগুন জ্বালাবেন না, বিদ্যুৎ চালু করবেন না। জানালা খুলে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন এবং পেশাদার মিস্ত্রি ডাকুন।

আগুন নেভানোর সরঞ্জাম রাখুন
প্রতিটি ভবনে অন্তত একটি করে আগুন নেভানোর যন্ত্র থাকা আবশ্যক। এই যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন। অগ্নিনির্বাপক বালতি, বালু ও পানি রাখুন সহজলভ্য স্থানে।

ফায়ার ড্রিল ও প্রশিক্ষণ
অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়া চালু রাখুন। কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিন। কীভাবে আগুন লাগলে তা মোকাবিলা করবেন। জরুরি নির্গমন পথ ব্যবহার করে বের হওয়ার অনুশীলন করুন।

সচেতনতামূলক প্রচারণা
স্থানীয়ভাবে অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করুন। গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করুন। স্কুল-কলেজে শিশুদের মাঝে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করুন।

অগ্নিকাণ্ডের সময় করণীয়

আগুন লাগলে প্রথমে ঘাবড়ে না গিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান। সম্ভব হলে মেইন সুইচ বা গ্যাস ভালভ বন্ধ করুন। চিৎকার করে আশপাশের লোকজনকে সতর্ক করুন। ধোঁয়ার মধ্যে নাক-মুখ ঢেকে বের হওয়ার চেষ্টা করুন। সিঁড়ি ব্যবহার করুন, কখনোই লিফট নয়। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলে তা ব্যবহার করুন। ফায়ার সার্ভিস (৯৯৯) এ দ্রুত ফোন করুন।

আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ

ভবন নির্মাণে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা উচিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে ভবন পরিদর্শনের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প কারখানায় ফায়ার সেফটি প্ল্যান, নির্গমন পথ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক স্তরে সচেতনতা, সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিই পারে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করতে।