জাতিসংঘে ট্রাম্পের ৪২৪ বাক্যের ভাষণ ঘিরে তীব্র বিতর্ক

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ভাষণ ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রায় ৪২৪ বাক্যের এই দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি অর্ধেকেরও বেশি সময় ব্যয় করেন নিজের প্রশাসনের সাফল্য ও কৃতিত্ব তুলে ধরতে। অন্যদিকে জাতিসংঘ, বৈশ্বিক অভিবাসন উদ্যোগ ও জলবায়ু নীতিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি।

ডাটা বিশ্লেষণভিত্তিক ওয়েবসাইট ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাষণের ১৯৮ বাক্যেই ট্রাম্প সরাসরি নিজেকে উল্লেখ করেছেন। অথচ বৈদেশিক নীতি, যুদ্ধ, ন্যাটো ও বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র ৭২ বাক্যে। এছাড়া ৪৬ বাক্যে অভিবাসন, ৩৪ বাক্যে জাতিসংঘবিরোধী মন্তব্য এবং ১২ বাক্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ঘিরে বক্তব্য দেন তিনি। টেলিপ্রম্পটার ও এসকেলেটর নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন সাতবার।

ভাষণে ট্রাম্প জাতিসংঘকে ‘অকার্যকর’ ও ‘ভণ্ডামির প্ল্যাটফর্ম’ বলে আখ্যায়িত করেন। জলবায়ু পরিবর্তন নীতিকে তিনি বৈশ্বিক প্রতারণা দাবি করে আবারও জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষে অবস্থান নেন। একইসঙ্গে তিনি অভিবাসনবিরোধী অবস্থান জোরালো করে বলেন, “যদি তোমার সীমান্ত না থাকে, তাহলে তোমার দেশও নেই।” এ বক্তব্যে কিছু প্রতিনিধির করতালি মিললেও অনেক রাষ্ট্রনেতা প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানান।

ভাষণে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী চারটি মন্তব্য বিশেষভাবে নজর কেড়েছে:
১।সার্বভৌমত্ব জাতিসংঘের মতো অনির্বাচিত বৈশ্বিক সংস্থার কাছে সমর্পণ করবেন না।
২। আমেরিকা সমৃদ্ধ হচ্ছে কারণ তারা নিজেদের প্রথমে রেখেছে; অন্য দেশগুলোকেও একইভাবে চলার পরামর্শ।
৩। জাতিসংঘ শান্তির বদলে ভণ্ডামির আসরে পরিণত হয়েছে।
৪। দেশগুলোর নিজস্ব সমস্যা সমাধান না করলে তারা ‘নরকে যাবে’।

ট্রাম্পের বক্তব্যে ফিলিস্তিনকেও বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল ও ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেন, এটি শান্তির বদলে সংঘাতকে আরও উসকে দেবে এবং হামাসকে পুরস্কৃত করার সমান।

ডয়চে ভেলের ফ্যাক্টচেক অনুযায়ী, ট্রাম্পের বক্তব্যে একাধিক ভুল তথ্য পাওয়া গেছে। যেমন তিনি দাবি করেন, জাতিসংঘ সদর দপ্তর সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে—কিন্তু বাস্তবে খরচ হয়েছে ২.১৫ থেকে ২.৩১ বিলিয়ন ডলার। আরও একটি বিতর্কিত দাবি ছিল, তিনি নাকি সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। অথচ তার উল্লেখিত সংঘাতগুলোর অনেকগুলোই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভাষণ কেবল বিষয়বস্তু নয়, বরং ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক ও সংঘাতমুখী ভঙ্গির জন্যও বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় এসেও তিনি জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার চেয়ে একক আধিপত্যের রাজনীতিতেই জোর দিচ্ছেন।