সুন্দরবনের দস্যুরা যেন বাঘের চেয়েও ‘ভয়ংকর’ হয়ে উঠছে

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম
সুন্দরবনের দস্যু। ফাইল ফটো

সুন্দরবনের গহিন অরণ্য আর বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা নদীজুড়ে এখন আর শুধু বাঘের ভয় নেই। জেলে, মৌয়াল, বনজীবীদের কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে উঠেছে সশস্ত্র দস্যু বাহিনীগুলো। দেশীয়-বিদেশি অস্ত্র, আর বোমা নিয়ে অন্তত পাঁচটি ‘ভয়ংকর গ্রুপ’ রাজত্ব করছে সুন্দরবনের দুই বিভাগজুড়ে। অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, নিয়মিত চাঁদাবাজি—সবই যেন এখন তাদের ‘নিয়মিত কর্ম’। কোস্টগার্ডের অভিযানে ধরা পড়ছে অস্ত্রের গোপন কারখানা, লেদ মেশিন, গুলি, মোবাইল, ওয়াকিটকি—যা দেখে হতবাক হচ্ছে বাহিনীও।

সোমবার (৫ মে) সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের শিবসা নদীসংলগ্ন আদাছগী এলাকায় কোস্টগার্ড একটি গোপন দস্যু আস্তানায় হানা দেয়। অভিযানে ধরা পড়ে কুখ্যাত ‘করিম শরীফ বাহিনী’র দুই সদস্য—সাদ্দাম খান ও আব্বাস মোল্লা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একনলা বন্দুক, শর্টগান, দেশীয় অস্ত্র, গুলি, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, ২৮টি মোবাইল, ১১টি ওয়াকিটকি চার্জার, কাঠের নৌকা, এমনকি অস্ত্র তৈরির লেদ মেশিন পর্যন্ত। কোস্টগার্ড জানায়, আটকরা দীর্ঘদিন ধরে অপহরণ ও চাঁদাবাজির পাশাপাশি দস্যুদের অস্ত্র ও রসদ জোগান দিয়ে আসছিল।

এর মাত্র কয়েকদিন আগে গত ২৭ এপ্রিল একই বিভাগের শিবসা ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় ‘আনারুল বাহিনী’র সদস্য বিল্লাল হোসেনও অস্ত্রসহ ধরা পড়ে। কোস্টগার্ডের টহলে বাকি সদস্যরা তখন পালিয়ে যায়।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের চিফ স্টাফ অফিসার কমান্ডার সঞ্জীব কুমার দে জানান, বর্তমানে সুন্দরবনে অন্তত পাঁচটি দস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে তারা অস্ত্র উদ্ধার ও দস্যু ধরার কাজ করছে। অনেক জেলেকেও দস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

তবে বাস্তবতা হলো, বাঘের ভয়ে যে সুন্দরবন ছিল রহস্যে মোড়া, আজ সেই বনে মানুষের ভয়ে শিকারিরাও পিছু হটছে। বন রক্ষা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় এখন সবচেয়ে জরুরি দস্যুদের কার্যক্রম পুরোপুরি দমন করা।