পাকিস্তানকে লজ্জায় ডোবাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
ছবি : সংগৃহীত

৩৪ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ত্রিনিদাদে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ২০২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে শাই হোপের দল।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ শেষে সিরিজ ছিল ১-১ সমতায়। সে কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তান সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি কার্যত অলিখিল ফাইনালে রূপ নিয়েছিল।

কিন্তু সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মঙ্গলবার পাকিস্তানকে রীতিমতো লজ্জার সাগরে ডুবিয়েছে উইন্ডিজ। একপেশে ম্যাচে পাকিস্তানকে ২০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ক্যারিবীয়রা। একই সঙ্গে দেশটির বিপক্ষে ৩৪ বছরের খরা কাটিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতল (২-১) উইন্ডিজ। সেটাও আবার রেকর্ড গড়ে। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই উইন্ডিজের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আগে ব্যাটিং করে অধিনায়ক শাই হোপের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে (৯৪ বলে অপরাজিত ১২০) ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৯৪ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। জবাবে ইনিংসের মোটে ২৯.২ ওভারে ৯২ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।

পাকিস্তানকে ধসিয়ে দেওয়ার পথে মাত্র ১৮ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন জেডন সিলস। তবে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা গিয়েছে সেঞ্চুরিয়ান হোপের হাতে। হতাশ হতে হয়নি সিলসকেও। তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা বাগিয়ে নিয়েছেন ডানহাতি এ পেসার।

অথচ কে জানত, ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে ম্যাচের গতিপথ এভাবে পরিবর্তিত হবে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান তুলতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছিল স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। ১০০ রানে পৌঁছাতে ইনিংসের ২৭তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে উইন্ডিজকে। সেখান থেকে দেড় শতে যেতে আরও ১০ ওভার লেগেছে ক্যারিবীয়দের।

৪৩ ওভার শেষেও উইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ১৯৪ রান। সেখান থেকেই ঝড়ের শুরু। ৪৪তম ওভারে মোহাম্মদ নেওয়াজের প্রথম বলে ছক্কা মেরে রান ২০০তে নিয়ে যান হোপ। পরের বলেও লং অন দিয়ে বল সীমানাছাড়া করেন উইন্ডিজ অধিনায়ক।

নেওয়াজের ওই ওভার থেকে ১৫ রান তোলে উইন্ডিজ। অবস্থা বেগতিক দেখে আবরার আহমেদের হাতে বল তুলে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। নিজের প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৫ রান দেওয়া আবরারের নামের পাশে ৮ ওভার শেষেও ছিল ১৬ রানে ২ উইকেট। ৪৫তম ওভারে নিজের নবম ওভার করতে এসে হোপ ঝড়ে আবরার এক ওভারেই দেন ১৮ রান।  

শুধু হোপ নন, ঝড় তুলেছিলেন জাস্টিন গ্রেভসও। হোপ-গ্রেভসের সপ্তম উইকেট জুটিতে মাত্র ৫০ বলে ১১০ রান পেয়েছে উইন্ডিজ। এর মধ্যে হোপ ৮৩ বলে তুলে নিয়েছেন নিজের ১৮তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৯৪ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ১২০ রানে অপরাজিত থাকেন হোপ। অন্যপ্রান্তে ২৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন গ্রেভস। দুজনের তাণ্ডবে শেষ পর্যন্ত তিন শ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ পায় উইন্ডিজ।

রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে পাকিস্তান। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ওপেনার সায়েম আইয়ুবকে হারায় পাকিস্তান। প্রথম ওভারে আইয়ুবকে ড্রেসিংরুমে পাঠানোর পর ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে আরেক ওপেনার আবদুল্লাহ শফিকের উইকেটটাও শিকার করেন সিলস। পাকিস্তানের দুই ওপেনারের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।

শুধু সায়েম আইয়ুস আর আবদুল্লাহ শফিক-ই নন, গতকাল ডাক মেরেছেন অধিনায়ক রিজওয়ান, হাসান আলী ও আবরার আহমেদও। পাকিস্তানের আরেক ভরসার নাম বাবর আজমও (৯) দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।

পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩০ রানের ইনিংস খেলেছেন সালমান আলী আগা। এছাড়া দুই অঙ্কের দেখা পেয়েছেন শুধু দুই নেওয়াজ- হাসান নেওয়াজ (৪০ বলে ১৩ রান) ও মোহাম্মদ নেওয়াজ (২৮ বলে অপরাজিত ২৩ রান)।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৯৪/৬ (হোপ ১২০* , গ্রিভস ৪৩* , আবরার ২-৩৪)
পাকিস্তান: ৯২ (আগা ৩০, নওয়াজ ২৩*; সিলস ৬/১৮, মোতি ২/৩৭)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ২০২ রানে।
ম্যাচসেরা: শাহ হোপ
সিরিজসেরা: জেইডেন সিলস