জমির নামজারি নিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, দালালনির্ভরতা এবং ঘুষ-অনিয়মের অভিযোগ দূর করতে বড় ধরনের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। নামজারি প্রক্রিয়াকে দ্রুত, সহজ ও স্বচ্ছ করতে একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এসব পরিবর্তন কার্যকর হলে দুর্নীতির সুযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি জারি করা এক উচ্চপর্যায়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভূমি সেবায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের হয়রানি কমানোই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নামজারির আবেদন হবে পুরোপুরি কাগজপত্রভিত্তিক ও যাচাইযোগ্য। আবেদনকারীদের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, আগের মালিকের প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ছবি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তবে কোনো কাগজে ভুল বা অসম্পূর্ণতা থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকবে এবং শর্ত পূরণ হলে আবেদন অনুমোদন পাবে।
উত্তরাধিকারীদের মধ্যে মালিকানা বণ্টন নিয়ে মতবিরোধ থাকলে এককভাবে নামজারির সুযোগ রাখা হয়নি। বণ্টননামা ছাড়া এ ধরনের নামজারি করলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিকল্প হিসেবে প্রতিটি ওয়ারিশ নিজ নিজ নামে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে যৌথ খতিয়ানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিয়ে আবেদন করলে ভূমি কমিশনার যৌথ খতিয়ান জারি করবেন, যেখানে প্রত্যেক ওয়ারিশের অংশ আলাদাভাবে উল্লেখ থাকবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ২১টি উপজেলায় নামজারি কার্যক্রমে অটোমেশন চালু হয়েছে, যা শিগগিরই সারাদেশে বিস্তৃত করা হবে। নতুন ব্যবস্থায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনের পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমি অফিসে পাঠানো হবে। যাচাই শেষে কোনো আপত্তি না থাকলে নতুন মালিকের নামে নামজারি সম্পন্ন হবে।
পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। আবেদনকারীর মোবাইলে বার্তার মাধ্যমে জানানো হবে, আবেদন কোন পর্যায়ে রয়েছে। একই প্ল্যাটফর্মে তিনটি সেবা পাওয়া যাবে—দলিল নিবন্ধন, খতিয়ান হালনাগাদ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে সংযুক্তকরণ।
নতুন ব্যবস্থায় প্রতিটি ভূমি মালিককে আলাদা ডিজিটাল আইডি ও অনলাইন মালিকানা সনদ দেওয়া হবে। কিউআর কোড বা ওয়েব লিংকের মাধ্যমে যে কেউ জমির প্রকৃত মালিকানা এবং সংশ্লিষ্ট দলিল যাচাই করতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল যাচাই ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া একত্রে চালু হওয়ায় দালালচক্রের দৌরাত্ম্য এবং ঘুষের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। নামজারি ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের জটিলতা দূর করতে এই সংস্কারকে ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন তারা।
এদিকে ভূমি মালিকদের নিজেদের দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ করে নতুন ব্যবস্থার আওতায় দ্রুত আবেদন সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।