রাতে হাদিকে নিয়ে স্ট্যাটাস, সকালেই এনসিপি নেত্রীর মরদেহ উদ্ধার

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম

রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাত আরা রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে জিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার রোড এলাকায় অবস্থিত জান্নাতী ছাত্রী হোস্টেলের পঞ্চম তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, জান্নাত আরা রুমী নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নাজিরপুর থানাধীন মো. জাকির হোসেনের মেয়ে। তার মায়ের নাম নুরজাহান বেগম। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের (ধানমন্ডি থানা) সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মৃত্যুর আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে জান্নাত আরা রুমী লেখেন, ‘ইয়া আল আল্লাহ, হাদিকে ভাই কে আমাদের খুব দরকার।’ এই স্ট্যাটাসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মরদেহ উদ্ধারের খবর সামনে আসে।

এদিকে জানা যায়, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন দুপুরে ধানমন্ডিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে মারধরের ঘটনায় জান্নাত আরা রুমীর নাম আলোচনায় আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেওয়ায় ওই নারীকে পেটানো হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর থেকে জান্নাত আরা রুমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ধমকির শিকার হচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে লেখেন, ‘কিভাবে লিখবো বুঝতেছি না। আমার হাত কাঁপতেছে। আপনাদের মনে থাকার কথা, গত মাসে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২-এ ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামীলীগাররা কী সিন ক্রিয়েট করেছিলো। সেখানে একজন জেন-জি নারীকে আপনারা দেখেছিলেন এক আওয়ামীলীগারকে (যে জিয়ার কবর খুড়তে চাইছিলো) পিটায়ে পুলিশের কাছে ধরায়ে দিতে।’

পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘সেই জেন-জি নারী গত এক মাস ধরে আওয়ামীলীগের ক্রমাগত সাইবার বুলিং, হ/ত্যা ও রেপ থ্রেটে অতিষ্ঠ হয়ে আজ রাতে আত্মহত্যা করেছে। ধানমন্ডির ভাইব্রাদারদের সাথে কথা হলো। তারা গত এক মাসে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে তার পাশে থাকার। কিন্তু সাইবার বুলিং আর ফোনকলে সারাদিন থ্রেট পাওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তবে কারোর কল্পনাতেও ছিলো না, বুলিংয়ের মাত্রা এত তীব্র যে সে আত্মহননের পথ বেছে নেবে।’

তারেক রেজা আরও লেখেন, ‘এটাকে আমরা আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন। যারা আমার বোনের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে, তাদের জীবন আমরা শান্তিতে কাটাতে দেবো না। আমার বোনের রক্তের শপথ!’

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। হাজারীবাগ থানার ওসি (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে আসল ঘটনা বের হবে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হচ্ছে।’

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জান্নাত আরা রুমী ওই এলাকায় বসবাসকালে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

পুলিশ আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিকভাবেও তিনি মানসিক চাপে ছিলেন। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।