৮ উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতির’ প্রমাণ আমার কাছে, বললেন সাবেক সচিব

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:৪২ পিএম
সাবেক সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে থাকার দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব ও সাবেক সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। তিনি অভিযোগ করেছেন, এসব উপদেষ্টার অনুমতি ছাড়া দেশে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ বা বদলি হয় না। 

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন তিনি। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি। বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলা এ সেমিনারে প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

আব্দুস সাত্তার বলেন, একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নূরজাহান বেগম চালাচ্ছেন—এটা কি গ্রহণযোগ্য? স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় কেন একজন অনভিজ্ঞ উপদেষ্টার হাতে থাকবে?’

তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত এক বছরে দুর্নীতি কমার পরিবর্তে বেড়েছে। উদাহরণ টেনে বলেন, এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি স্কুলের জমির নামজারিতে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছেন, ঢাকার আশপাশের এক ইউএনও একটি কারখানার লে–আউট পাশ করতে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্টের পর বিএনপির কার্যালয়ে হাজার হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী ভিড় করছিলেন। তারেক রহমান জিজ্ঞেস করলে আমি বলি, এরা সবাই দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়ে ন্যায়বিচারের আশায় এসেছেন।

তখন তিনি বলেন, ইন–সার্ভিস কর্মকর্তাদের দলীয় অফিসে আসা উচিত নয়। এরপর আমি অফিসের গেটে নোটিশ টাঙিয়ে দিই ইন সার্ভিস কোনো কর্মকর্তা দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না, প্রয়োজনে অফিসার্স ক্লাবে আসবেন।’ 

আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সাড়ে তিন ঘণ্টার এ আলোচনায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অনিয়ম–দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলমুক্ত রাখার আহ্বান উঠে আসে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম। 

প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাফিউল ইসলামসহ অনেকে। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, আবু সাঈদ, মাহমুদুর রহমান সৈকত ও শাহরিয়ার খান আনাসের স্বজনরা বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি কর্মকমিশনের সচিব সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া।