চিকিৎসকদের উপহার দিতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম

হাসপাতালে গেলেই চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে বিভিন্ন উপহার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের। সেখানে তারা চিকিৎসকদের নমুনা ওষুধসহ বিভিন্ন উপহার দিয়ে রোগীদের ব্যবস্থানপত্রে তাদের নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধ লেখার অনুরোধ করেন। তবে এবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এই কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার (৫ মে) বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন পেশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।

কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনসহ ৭টি আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনগুলো হলো— বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ এবং প্রবেশাধিকার আইন, অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কমিশনার আইন, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কমিশনার আইন।  

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের ওই প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবনার আলোকে চিকিৎসকদের ওষুধের নমুনা বা উপহার প্রদান করে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল কনফারেন্স আয়োজনের আগে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অনুমোদিত ক্রেডিট পয়েন্ট গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে এবং মেডিক্যাল কনফারেন্সের সব আয়-ব্যয়ের হিসাব ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে হবে এবং এর একটি কপি বিএমইএসি-তে জমা দিতে হবে।

কনফারেন্সে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো অনুমোদিত কনফারেন্সে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে, তবে কেবলমাত্র প্রদর্শনী এলাকায় পণ্যের উপস্থাপনার জন্য তাদের প্রতিনিধির শারীরিক উপস্থিতি অনুমোদিত থাকবে। কোনো ধরনের খাবার, উপহারের ব্যাগ বা অন্য কোনও উপহার সামগ্রী সরবরাহ ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধূলা, রাফেল ড্র ইত্যাদি করতে পারবে না।

সুপারিশে আরও বলা হয়, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকদের ই-মেইল বা ডাকযোগের মাধ্যমে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারবে না। চিকিৎসকের চেম্বার বা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের ওষুধের/ পণ্য প্রচার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে, কারণ এসব কর্মকাণ্ডে চিকিৎসকের মনোযোগ বিঘ্নিত হয় এবং রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের সদস্য করা হয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এস এম রেজা, অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, ডা. আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফকে।