সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা (৩৯) বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মোকাবিলায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বলে যে অভিযোগ, এর শুনানিতে এ সাক্ষ্য দেন।
পেতংতার্নকে স্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হবে কি না, তা নিয়ে শুক্রবার রায় দেবেন আদালত। এএফপির বরাতে এ খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আদালতের রায়ের মুখোমুখি হচ্ছে থাইল্যান্ডের ধনকুবের সিনাওয়াত্রা পরিবার, যা তাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বড় পরীক্ষা হতে পারে। এর ফলে দ্রুত নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং থাইল্যান্ডের দুর্বল অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের সাবেক বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী থাকসিন সিনাওয়াত্রার (৭৬) মেয়ে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুনসেনের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি দেশের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ অবস্থান নেননি। সেই ফোনালাপের অডিও অনলাইনে ফাঁস হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনার পর সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার বরখাস্তের দাবিতে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। গত মাসে আদালত তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেন এবং বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এর আগে গত বছর এ ধরনের একটি নৈতিকতার মামলায় আদালত আগের প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছিল।
পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সাক্ষ্যদানের দিন কালো স্যুট পরে ব্যাংককের আদালতে পৌঁছান এবং সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার উপদেষ্টা প্রোমিন লার্টসুরিদেজ, যিনি একই মামলায় অভিযুক্ত। পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা প্রায় দেড় ঘণ্টা বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তবে শুনানিতে কী বলা হয়েছে, তা প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
যদি আদালতের রায় পেতংতার্নের বিরুদ্ধে যায়, তবে তিনি হবেন সিনাওয়াত্রা পরিবার থেকে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদচ্যুত হবেন। এর আগে তার বাবা থাকসিন ও খালা ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক টানাপোড়েনে সিনাওয়াত্রা পরিবার ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে। গত দুই দশক ধরে থাই রাজনীতি মূলত গড়ে উঠেছে সেনাপ্রধান, রাজতন্ত্রপন্থি রক্ষণশীল অভিজাত গোষ্ঠী এবং সিনাওয়াত্রা পরিবারকে ঘিরে। এই অভিজাত গোষ্ঠী সিনাওয়াত্রাদের দেশের প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি মনে করে।
আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে বরখাস্ত প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে স্থায়ীভাবে পদচ্যুত হতে পারেন। একই সঙ্গে তার বাবা বিতর্কিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা পুনরায় কারাবন্দি হতে পারেন।