কে এই ইরানি, ক্ষমতা দখলে হাত মেলাল ইসরায়েলের সঙ্গে

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ০৯:২২ এএম
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু (বাঁয়ে), তার স্ত্রী সারাহ, রেজা পাহলাভি ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা গামলিয়েল। ছবি: সংগৃহীত

ইরানে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতকে কেন্দ্র করে আবারও সামনে এসেছে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত শাহর পুত্র প্রিন্স রেজা পাহলাভির নাম। তিনি প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন বাদ দিয়ে জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে। অনেকের কাছে এটা স্পষ্ট যে তিনি অস্থিরতা ও অরাজকতাকে পুঁজি করে আবারও ক্ষমতায় ফেরার পথ সুগম করতে চাইছেন।

রেজা পাহলাভি ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন। তার পর থেকে তিনি ক্রমাগত ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সমালোচক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে আসছেন।

রেজা পাহলাভি প্রকাশ্যে বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হোক (শাহর আমলে যেমন ছিল)। তিনি মনে করেন, ইসলামিক রিপাবলিকের শাসনব্যবস্থাই মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে।

রেজা পাহলাভিকে সমর্থন দিচ্ছে আবার কারা? তথ্য বলছে, তার এ পদক্ষেপকে সমর্থন ও উৎসাহ দিচ্ছে ইসরায়েল ও পশ্চিমা মহল। কারণ, তিনি মনে করছেন, ইসলামিক রিপাবলিকের পতনই মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আসবে। অপর দিকে সমালোচকেরা বলছেন, রেজা পাহলাভিতে বিনিয়োগ মানে হচ্ছে বিদেশিদের মাধ্যমে আবারও অভ্যুত্থান ও অরাজকতা চাপিয়ে দেওয়া।

সম্প্রতি তিনি সামাজিক মাধ্যমে ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যে ভাষায় কথা বলছেন, তা অনেকটাই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাষণের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘আলী খামেনি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রই এই অস্থিরতা ও যুদ্ধের কারণ।’ তার দাবি, এটা ‘ইরান ও তার জনগণের লড়াই নয়, এটা হচ্ছে খামেনি ও ইসলামি সরকারের লড়াই।’

রেজা পাহলাভিতে সমর্থন রয়েছে ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের। কারণ, তিনি বলেছেন, ইসলামিক রিপাবলিককে উৎখাত করাই সমাধান, যা অনেকটাই আমেরিকা ও ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলে যায়। তিনি রাজপথের আন্দোলন ও ধর্মঘট সমর্থন করেন, যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়াতে পারে ও অভ্যুত্থানে সহায়ক হতে পারে।

রেজা পাহলাভিতে চাইছেন, কিছু ধর্মীয় নেতা ও সেনাপ্রধানের কবল থেকে ক্ষমতা জনগণের কাছে ফেরত যাক। তিনি প্রকাশ্যে বলছেন, এটা অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও চাপের মাধ্যমে হতে পারে— বিদেশি সেনাবাহিনী বা অভ্যুত্থান দিয়ে নয়।

সমালোচকেরা বলছেন, রেজা পাহলাভিকে সমর্থন দেওয়া মানে হচ্ছে, সমগ্র দেশের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত ও অরাজক করে দেওয়া। রেজা পাহলাভি চাইছেন, বিদেশিদের সমর্থন ও অভ্যুত্থানকে পুঁজি করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে।

ইরানে সরকার পতন চাইছে ইসরায়েল। ইরান ও ইসরায়েল আজ ‘চিরশত্রু’ হিসেবে বিবেচিত হলেও, সম্পর্কের ইতিহাস একেবারে বিরোধপূর্ণ ছিল না। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিভাজন পরিকল্পনায় ইরান আপত্তি জানায়। তারা একটি যুক্ত ফেডারেটেড রাষ্ট্র চেয়েছিল, যেখানে আরব ও ইহুদি ক্যান্টন থাকবে। তবু ১৯৫০ সালে ইরান তুরস্কের পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনামলে ইরান-ইসরায়েল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, একে অপরের রাজধানীতে দূতাবাস খোলে, ইরান তেল সরবরাহ করে। তবে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব এ সম্পর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। খামেনি নেতৃত্বাধীন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে রূপান্তর করে এবং ইসরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।

ইরানে শুক্রবার যে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল, তা শুধু পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করার জন্যই নয়, বরং তারা চাইছে ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টি হোক ও সরকার দুর্বল হয়ে পড়ুক। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মনে করছেন, যদি মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে, তাহলে ইসলামিক সরকারের পতন হতে পারে। অনেক ইরানি অর্থনৈতিক দুর্দশায় রয়েছে ও মতপ্রকাশের সুযোগ কম, তাই ইসরায়েল চাইছে এই অসন্তুষ্টিকে কাজে লাগাতে।