ডেঙ্গু শনাক্ত করতে যেসব পরীক্ষা করতে হবে

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। বিশেষ করে বর্ষাকাল ও বৃষ্টির পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ অনেক সময় সাধারণ জ্বরের মতো মনে হলেও, এটি উপেক্ষা করা বিপজ্জনক। সময়মতো সঠিক পরীক্ষা না করালে রোগ জটিল আকার নিতে পারে, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।

তাই ডেঙ্গু সন্দেহ হলে বা ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করানো জরুরি। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করা হয়ে থাকে:

এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট

এই পরীক্ষা ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি বিশেষ প্রোটিন (NS1 অ্যান্টিজেন) সনাক্ত করে। রোগের শুরুতে (প্রথম ১-৫ দিনের মধ্যে) এই অ্যান্টিজেন রক্তে উপস্থিত থাকে। এটি প্রাথমিক পর্যায়েই ডেঙ্গু শনাক্ত করতে সাহায্য করে। রেজাল্ট দ্রুত পাওয়া যায় (৬–২৪ ঘণ্টার মধ্যে)। একিউট (তীব্র) ডেঙ্গু শনাক্তে কার্যকর এই পরীক্ষা। জ্বর শুরু হওয়ার প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই এই টেস্ট করানো উত্তম।

সিবিসি (CBC) বা সম্পূর্ণ রক্ত গণনা

CBC টেস্টে রক্তের উপাদান যেমন প্লেটলেট, হিমোগ্লোবিন, হোয়াইট ব্লাড সেল (WBC), রেড ব্লাড সেল (RBC) ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। প্লেটলেট কাউন্ট দেখে বোঝা যায় রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা আছে কি না। হেমাটোক্রিট (HCT) বেড়ে গেলে রক্ত ঘন হয়ে যাচ্ছে, যা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ হতে পারে। WBC কমে যাওয়া ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ। প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিন বা একদিন পরপর প্লেটলেট ও হেমাটোক্রিট পর্যবেক্ষণ জরুরি।

ডেঙ্গু আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট

এই পরীক্ষায় রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডি IgM ও IgG খুঁজে দেখা হয়। IgM টেস্ট দ্বারা বোঝা যায় এটি নতুন সংক্রমণ কি না। IgG দ্বারা বোঝা যায় এটি পূর্বে হওয়া সংক্রমণ কি না বা সেকেন্ডারি ইনফেকশন কি না। জ্বর শুরুর ৫–৭ দিন পর এই পরীক্ষাগুলো করানো হয়, কারণ তখন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

ডেঙ্গু পিসিআর টেস্ট
এই পরীক্ষায় ডেঙ্গু ভাইরাসের জিন (RNA) শনাক্ত করা হয়। খুবই নির্ভুল এবং নিশ্চিত ফলাফল দেয়। ভাইরাসের ধরন (সেরোটাইপ) শনাক্ত করা যায়। জ্বরের শুরুর ১–৫ দিনের মধ্যে এটি করতে হবে।

সিরাম ইলেকট্রোলাইট ও লিভার ফাংশন টেস্ট

ডেঙ্গু ভাইরাস লিভারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই LFT করে দেখতে হয় লিভার এনজাইম (SGPT, SGOT) স্বাভাবিক আছে কিনা। সিরাম ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষায় দেখা হয়-সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইডের মাত্রা কতটুকু রয়েছে।

ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

উপসর্গ দেখা দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই NS1 বা CBC করিয়ে নিন। প্লেটলেট দ্রুত কমে যেতে পারে, তাই ধারাবাহিকভাবে মনিটরিং জরুরি। নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে পেইন কিলার বা অ্যাসপিরিন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।