দাঁতের মাড়ি ফোলা সাধারণ সমস্যা। কিন্তু বেশ অস্বস্তিকর। হঠাৎ করেই দাঁতের মাড়ি ফুলে যেতে পারে। এতে খাওয়া-দাওয়া, কথা বলায় অসুবিধা হয়। সেই সঙ্গে দাঁতের গোড়ায়ও সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই মাড়ি ফুলে গেলে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিকার নেওয়া জরুরি।
দাঁতের মাড়ি ফোলার প্রতিকারের আগে এর কারণগুলো জানতে হবে। সাধারণত কয়েকটি কারণে মাড়ি ফুলে যায়।
জিনজিভাইটিস
এটি মাড়ির সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। দাঁতের গায়ে প্লাক বা ব্যাকটেরিয়া জমে মাড়ি প্রদাহ সৃষ্টি করে।
দাঁতের খারাপ যত্ন
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে বা ভুলভাবে ব্রাশ করলে মাড়ি আক্রান্ত হতে পারে।
ভিটামিন সি-এর ঘাটতি (স্কার্ভি)
দীর্ঘদিন ভিটামিন সি-এর অভাবে মাড়ি ফুলে যায় ও রক্ত পড়ে।
হরমোনের পরিবর্তন
গর্ভাবস্থা, মাসিক বা মেনোপজের সময় হরমোন পরিবর্তনের ফলে মাড়ি সংবেদনশীল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
ইনফেকশন বা ফোড়া
মাড়ির ভেতরে ফোড়া (Abscess) বা ইনফেকশন হলে ফুলে যায়, ব্যথা করে এবং কখনো পুঁজ বের হতে পারে।
ধূমপান ও মদ্যপান
এসব অভ্যাস মাড়ির রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়, ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
ভুল দাঁতের ব্যবহার
অনুপযুক্ত ডেন্টাল ব্রেস, ক্যাপ, ফিলিং বা কৃত্রিম দাঁতও মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কী করবেন?
নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করুন
মাড়ি ফুললে শক্ত টুথব্রাশ ব্যবহার করলে ক্ষতি বাড়তে পারে। তাই নরম ব্রিসলযুক্ত ব্রাশ দিয়ে ধীরে ধীরে দাঁত পরিষ্কার করুন।
গরম লবণ পানির কুলকুচি
এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন। এটি প্রদাহ কমায়, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ব্যথা উপশমে সহায়ক।
বরফ সেঁক
মাড়ি ফুলে গেলে গালে বাইরে থেকে ঠান্ডা বরফ সেঁক দিন। এতে ফোলা ও ব্যথা দুটোই কমে।
ভিটামিন সি গ্রহণ করুন
তরতাজা ফল যেমন কমলা, লেবু, আমলকি, পেয়ারা বেশি খান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
মুখের সঠিক যত্ন নিন
প্রতিদিন দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন এবং দিনে অন্তত একবার ফ্লস ব্যবহার করুন। এতে দাঁতের ফাঁকে থাকা খাবার ও ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার
ফার্মেসিতে পাওয়া যায় এমন ব্যাকটেরিয়া নাশক মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে সংক্রমণ কমে এবং মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়।
ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করুন
ধূমপান ও মদ্যপান মাড়ির রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে এবং আরোগ্য প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, মাড়ি ফুলে গিয়ে ব্যথা হওয়া, মুখে দুর্গন্ধ থাকা, দাঁতের চারপাশে পুঁজ জমা, খাওয়ার সময় ব্যথা হওয়া এবং কয়েকদিনের মধ্যে ফোলা না কমলে দাঁতের চিকিৎসকের (ডেন্টিস্ট) পরামর্শ নিন।
মাড়ি ফোলা প্রতিরোধে করণীয়
মাড়ি ফোলা প্রতিরোধে প্রতিদিন দুইবার সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করবেন। নরম ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করবেন। বছরে অন্তত একবার দাঁতের চেকআপ করাবেন। চিনিযুক্ত খাবার ও কোমল পানীয় কম খাবেন। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। ভিটামিন ও খনিজযুক্ত খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করুন।