মৃগীরোগ একটি স্নায়বিক সমস্যা, যার মূল বৈশিষ্ট্য হলো বারবার খিঁচুনি হওয়া। এটি মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের অস্বাভাবিকতা থেকে সৃষ্টি হয়। মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, হাত-পা কাঁপতে পারে, চোখ উল্টে যেতে পারে বা অদ্ভুত আচরণ করতে পারেন। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। তবে সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
মৃগীরোগ কীভাবে হয়
মস্তিষ্কের কোষগুলো বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে কাজ করে। কোনো কারণে এই বৈদ্যুতিক সংকেত যখন হঠাৎ অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে, তখনই খিঁচুনি হয়। এই খিঁচুনিই মূলত মৃগীরোগের লক্ষণ।
মৃগীরোগের কারণ
মৃগীরোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
জেনেটিক বা বংশগত কারণ
কিছু ধরনের মৃগী পরিবারে উত্তরাধিকার সূত্রে দেখা যায়।
মস্তিষ্কের গঠনের সমস্যা
জন্মের সময় মস্তিষ্কের কোনো বিকৃতি থাকলে মৃগীর ঝুঁকি বাড়ে।
মস্তিষ্কে আঘাত
সড়ক দুর্ঘটনা, মাথায় আঘাত, পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি থেকে মৃগী হতে পারে।
স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণ:
বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ মৃগীর একটি বড় কারণ।
মস্তিষ্কে সংক্রমণ
মস্তিষ্কে সংক্রমণ মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস, স্নায়ুর টিউবারকুলোসিস ইত্যাদি রোগ মৃগীর কারণ হতে পারে।
টিউমার বা মস্তিষ্কে বৃদ্ধির সৃষ্টি
মস্তিষ্কে টিউমার থাকলে সেটিও মৃগী সৃষ্টি করতে পারে।
অক্সিজেনের ঘাটতি
জন্মের সময় যদি শিশুর মস্তিষ্কে যথেষ্ট অক্সিজেন না পৌঁছে, তবে পরবর্তী জীবনে মৃগী হতে পারে।
মৃগীরোগের লক্ষণ
খিঁচুনির ধরন অনুযায়ী লক্ষণ বিভিন্ন রকম হতে পারে—হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হাত-পা শক্ত হয়ে কাঁপতে থাকা, দাঁত চেপে ধরা, চোখ উল্টে যাওয়া, মুখ থেকে লালা পড়া, কিছুক্ষণ অদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, আচরণে অস্বাভাবিকতা (যেমন: একটানা হাত নাড়ানো, হেঁটে বেড়ানো), খিঁচুনি শেষে ঘুমিয়ে পড়া বা বিভ্রান্ত লাগা। তবে সব খিঁচুনিই মৃগীর লক্ষণ নয়। নিয়মিত খিঁচুনি হলে অবশ্যই চিকিৎসা করা জরুরি।
মৃগীরোগ কি প্রাণঘাতী?
মৃগীরোগ সাধারণত সরাসরি প্রাণঘাতী নয়। তবে এটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যেমন—খিঁচুনির সময় পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া, পানিতে খিঁচুনি হলে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি, গাড়ি চালানোর সময় খিঁচুনি হলে দুর্ঘটনা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে। আধুনিক চিকিৎসায় মৃগী রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।