• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ছবির মতো সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রাম ‘মাওলিনং’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২১, ০২:৫৭ পিএম
ছবির মতো সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রাম ‘মাওলিনং’

মেঘালয়ের ছোট গ্রাম ‘মাওলিনং’। পুরো এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম এটি। গ্রামবাসীর  পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়িঘর সব কিছুই একদম ঝকঝকে। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে চলেন প্রত্যেকে। কোথাও কিছু ফেলে না, কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না, গাছের ফুল বা পাতা ছেড়াও নিষেধ এই গ্রামে। শুধু তাই নয়, মদ্যপানেও রয়েছে গ্রামবাসীর নিষেধাজ্ঞা। এক কথায়, পবিত্র, সুন্দর একটি গ্রাম ‘মাওলিনং’।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যে মেঘের কাছাকাছি অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম ‘মাওলিনং’। গ্রামটির সৌন্দর্য দেখলে মনে হবে, ছোট বেলার চিরচেনা রূপকথার বইয়ের পাতায় আঁকা ছবি। প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে পুরো গ্রাম জুড়ে নেউ কোনো আবর্জনার স্তুপ। মনের আনন্দে হেটে বেড়ানো যাবে। মনে হবে, এ যেন এক স্বপ্নের রাজ্য়।

গ্রামটি বেশ গুছানো। বাড়িগুলো সুন্দরভাবে সাজানো। সবুজ গাছগাছালির মধ্যে ফুটে রয়েছে  বাহারি ফুল। প্রজাপতিরাও মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।গ্রামের বাসিন্দারাও সবাই শিক্ষিত। গ্রামের বিভিন্ন কোণে দেখা যাবে গ্রামবাসীর রুচির প্রতিফলন। ঘর-বাড়ি তো বটেই গ্রামের ডাস্টবিনও সাজানো রয়েছে সুন্দরভাবে। এমনকি পুরো গ্রামে বন্ধ রয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহারও। পাহাড়ি নদীর উপর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়েছে গাছের শেকরের সেতু।

গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে পৃথক টয়লেট। এগুলো পরিচ্ছন্নভাবেই রাখা হয়। বাঁশের তৈরি ডাস্টবিনেও সব আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। সব আবজর্না একটি বড় গর্তে (পিট) সংগ্রহ করে রাখা হয়। পরে তা জৈব সার হিসেবে কাজে লাগানো হয়। এছাড়াও গ্রামের স্বেচ্ছাসেবীরা রাস্তাঘাট পরিষ্কার করেন নিয়মিত। গ্রামের বাসিন্দারা সবুজায়ন রক্ষায় নিয়মিত গাছ লাগান। পাহাড়ি একটি ঝর্নার উপরে গাছের শিকড়ের তৈরি রয়েছে একটি সাঁকো। যা সত্যিই বিষ্ময়কর!

মেঘালয়ের পশ্চিম খাসি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত ছোট্ট এই গ্রামটি। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। বাংলাদেশে থেকে প্রবেশ করতে চাইলে যেতে হবে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে। সেখান থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রামটি।

গ্রামের বসতবাড়ি রয়েছে মাত্র ৯৫টি এবং গ্রামের বাসিন্দা মাত্র ৫০০ জন। এই গ্রামে স্বাক্ষরতার হার শতভাগ। গ্রামের বাসিন্দারা ছোটবেলা থেকেই পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা নিয়ে বড় হন।

‘মাওলিনং’ গ্রামের সমাজব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। এখানে সম্পদের মালিক হন একমাত্র মেয়েরা। এরপর বংশ পরপরায় মায়ের সম্পদের উত্তরাধিকারী থাকেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়েটি। এমনকি মায়ের নামের পদবি নিয়েই সন্তানরা এখানে বড় হোন। কৃষি প্রধান এই গ্রামে সুপারি ও বাদামের জন্য় বিখ্যাত।

গ্রামটিতে প্রথম সড়ক নির্মাণ হয় ২০০০ সালের পর। সুন্দর-পরিচ্ছন্ন গ্রামটি পর্যটকদের কাছে ওই সময় তেমন পরিচিত ছিল না। ২০০৩ সালের আগেও অনেকেই গ্রামটির কথা জানতেন না। যদিও সড়ক ব্যবস্থাও খুব ভালো ছিল না। হেটেই অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হতো সেখানে।

২০০৫ থেকেই শুরু হয় পর্যটকদের আসা যাওয়া। পরিচ্ছন্নতম গ্রামটি দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। গ্রামটির কঠোর নিয়ম মেনেই ঘুরে বেড়াতে হয় পর্যটকদের।

ভারতের ট্রাভেল ম্যাগাজিন ডিসকভার ইন্ডিয়া সাংবাদিক প্রথম ঘুরে আসেন গ্রামটি। গ্রামটিকে নিয়ে বিস্তর প্রতিবেদন লিখেন। সেখানেই এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের আখ্যা পায় ‘মাওলিনং’।

Link copied!