ঘরের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে এই ম্যাচে জয়ের নায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। অথচ এই দুইজনের আফগানিস্তান সিরিজের স্কোয়াডে থাকাটাই ছিল অনিশ্চিত!
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ম্যাচ শেষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আর সেখানেই দুজনের স্কোয়াডে থাকা না থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
বিসিবি বস বলেন, ‘আমি এটা (আফিফ-মিরাজের অবদানে জয়) এখন নামার সময় বলছিলাম। পরশু দিনও কিন্তু এরা খেলবে যে এই জিনিসটা নিশ্চিত ছিল না। স্কোয়াডে এরা খেলবে কী না এটা কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এখানে অন্য নামও ছিল। কিন্তু অপশন তো আমাদের আছে। তবে চিন্তা করছি যদি এরা না খেলতো কী হতো!’
এদিকে শুরুতে হারের দিকে এগোতে থাকা বাংলাদেশ যে জিততে পারে এমন বিশ্বাস ছিল না পাপনেরও মূলত আফিফ-মিরাজের জুটিতেই তার পাশে থাকা লোকজন স্বপ্ন দেখালেও তার বিশ্বাস তৈরি হচ্ছিল না। ।
পাপনের ভাষ্য, ‘সত্যি কথা বলতে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। সবাই আমরা বলছিলাম ৫০ ওভার খেলতে পারলে আমরা জিতব। আমি বার বার বলছিলাম এই দুইজন যদি খেলে যেতে পারে তাহলে আমরা জেতার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এটাও অলমোস্ট অসম্ভব মনে হচ্ছিল। যেভাবে আমাদের প্রথম ৬ উইকেট গেল মনে হচ্ছিল যে এদের বল খেলা যাচ্ছে না, খেলার মতো না।’
‘‘কিন্তু এরা (আফিফ-মিরাজ) এসে যে স্বাচ্ছন্দে খেলে গেলো কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, কেবল পুরোদমে আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ওদের কখনোই মনে হয়নি ওরা নার্ভাস। অথচ প্রথম দিকে ওদের নার্ভাস বলব না দ্বিধাগ্রস্ত মনে হচ্ছিল। যে সমস্ত শট খেলেছে একটু ঘাবড়ে গেছিলাম। তবে যত সময় যাচ্ছিল ততবেশি ওই বিশ্বাসটা জোর হচ্ছিল যে ওরা থাকলে জিতে যাব, ওরা থাকলে জিতে যাব। তবে একটা অসম্ভব কাজ। অসাধারণ একটা ম্যাচ খেলেছে দুইজন, আফিফ-মিরাজ।’’
আফিফ ও মিরাজ থাকায় বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা অনেকটাই আড়াল হয়ে গেছে। তবে ৪৫ রানে ৬ উইকেটের পতন যে অশনিসংকেত, তা মানতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। আফগানিস্তানের স্পিনারদের নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও তাদের পেসার ফজলহক ফারুকিই ধসিয়ে দিয়েছিলেন। বিষয়টি মানতে কষ্ট হচ্ছে পাপনের।
তিনি বলেন, ‘কয়েকটা আউট, কয়েকটা শট এত বাজে ছিল। বিশ্বাস হচ্ছিল না, এই বল এভাবে খেলে আউট হবে কেন। এই দুজনের একজন যদি না থাকত, তাহলে তো হেরে যেতে পারতাম।’
পাপন তাই পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেটে ভয় পেয়ে খেলার কোনো সুযোগ নেই। আফগানিস্তান ভালো দল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের বিশ্বমানের বোলার আছে। কিন্তু যাদের নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকার কথা তাদের কিন্তু উইকেট দেইনি। আমরা উইকেট দিয়েছি একজন পেসারের হাতে!’
চট্টগ্রামে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আফগানরা৷ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রশিদ খানদের থামতে হয় নির্ধারিত ৫০ ওভারের আগেই। সবকয়টি উইকেট হারিয়ে তারা স্কোরবোর্ডে ২১৫ রান জমা করতে পারে।
স্বল্প লক্ষ্য সহজেই উতরে যাওয়ার বদলে কঠিন করে তোলে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৪৫ রানেই ৬ ওপেনার ও মিডল অর্ডার হারিয়ে দল যখন দিশেহারা, হাল ধরেন মিরাজ ও আফিফ। অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটা বের করে নিজেদের দখলে নিয়েছে তারা।
আফিফ ও মিরাজের অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশ পরাজয় এড়িয়ে জয়ের আনন্দে ভাসে। আন্তর্জাতিক ওয়ানডের সপ্তম উইকেট জুটিতে তাদের এই জুটি এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
আগামীকাল শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে একই ভেন্যুতে সকাল ১১ টায় খেলতে নামবে দুই দল। এদিন বাংলাদেশ চাইবে জয় তুলে সিরিজ নিজেদের করে নিতে। অন্যদিকে আফগানদের লক্ষ্য জয় দিয়ে সিরিজে টিকে থাকতে।