ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব বিশ্ব রাজনীতির বহু পুরাতন একটি সমস্যা। নানা সময় নানা আলোচনা হলেও সমস্যা সমাধানে হয়নি কোনো পথ। সুযোগ পেলেই বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় ফিলিস্তিনিরা। কাতার বিশ্বকাপেও এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে দেশটির জনগণ। কাতারের রাজধানী দোহায় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজ দেশের উপস্থিতি তুলে ধরছেন কাতারে থাকা ফিলিস্তিনি নাগরিক। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন, বিশ্বকাপ দেখতে আসা ফিলিস্তিনিরাও।
কাতারজুড়ে অসংখ্য ফিলিস্তিনিদের বসবাস। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা বেছে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে। নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুটবল বিশ্বকাপকে বলা হয়- ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। প্রায় ৪০০ কোটি সমর্থক নিয়ে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কাতার বিশ্বকাপে ৩২ দেশ অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও খেলা উপভোগ করতে দেশটিতে বিশ্বের প্রায় সবদেশ থেকেই লোকজন এসেছেন। তাই ফিলিস্তিনিরাও চায়, এই সুযোগে নিজেদের অস্তিত্ব তুলে ধরতে।
এই নিয়ে কাতারে থাকা এক ফিলিস্তিনি বলেন, “বিশ্বকাপ আমাদের দারুণ একটি সুযোগ দিয়েছে। আমরা এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিবো।”
কাতারে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি নাগরিক গায়ে ফিলিস্তিনের পতাকা জড়িয়ে বের হচ্ছেন। পাশাপাশি দেশটির ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফ প্যালেস্টাইন কেফফিয়েহ ব্যবহার করছেন। তাদের পরিধানকৃত টি-শার্টে লেখা ইংরেজি হরফে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।
বিষয়টি বেশ কার্যকর হচ্ছে বলে জানান, কাতারে থাকা এক ফিলিস্তিনি নাগরিক। “বিদেশিরা আমাদের দেখে এগিয়ে আসছে। তারা জানতে চাচ্ছে, আমরা কোথা থেকে এসেছি বা আমাদের সমস্যা কী। যদিও ফিলিস্তিন বিশ্বকাপ খেলছে না, তবুও আমরা সবার নজর পাচ্ছি।”
বিদেশি নাগরিকদের সাথে কথা বলায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বোঝাতে সহজ হচ্ছে। “কাতারে বিশ্বের প্রায় সবদেশের লোকজন এসেছে। তাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি সম্পর্কে জানাতে পারছি। আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসও তারা জানতে পারছে।”
শুধু বিশেষ ধরনের পোশাক পরেই সবার নজর কাড়ার চেষ্টায় মত্ত নয় ফিলিস্তিনিরা। স্টেডিয়ামগুলোর আশেপাশে নানা আয়োজনও রয়েছে তাদের। সেখানে সাংস্কৃতিক আয়োজনে নিজেদের জনপ্রিয় গান দাম্মি ফালাসতিনি গাচ্ছেন। গানটিতে ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখল-বসতি স্থাপন ও দেশটিকে কিভাবে শোষণ করছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও গানটিতে উঠে এসেছে ফিলিস্তিনদের জীবন-যাপনের গল্প। তাদের পরিচয়।
কাতারজুড়ে চলা বিশ্বকাপের মাঝে ফিলিস্তিনদের এই কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিশ্বেই। সেখান থেকেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মিলছে সাড়া। এমনকি বিষয়টি ইসরায়লের গণমাধ্যমগুলোতেও প্রকাশ করা হচ্ছে গুরুত্বসহকারে।
কাতারে ফিলিস্তিনিদের এই কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ে কথা বলেন আসমা জাবের। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কাতারে এসে এই কর্মকাণ্ড দেখে বেশ অভিভূত এই ফিলিস্তিনি। বলেন, “পুরো বিশ্বের কাছে আমাদের এই কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে পারাটা আমাদের জন্য গর্বের।” কাতারে বিশ্বকাপে উপভোগ করতে আসা আসমা ফিলিস্তিন হলেও তার বেড়ে ওঠা জর্ডানের শরণার্থী শিবিরে। সেখানে জীবন কতটা কঠিন ছিল, সেই বিষয়টিও সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান আসমা।
তিনি বলেন, “আমার দাদা-দাদী ১৯৪৮ সালে জর্ডানে পাড়ি জমিয়েছিল। তখন থেকেই আমরা জর্ডানের ওই শরণার্থী শিবিরে বড় হয়েছি। আমি চাই, ফিলিস্তিনে শান্তি ফিরুক। আমরা সেখানে ফিরি। জানি না সেখানে ফিরতে পারবো কি-না।”
কাতারে তৈরি করা এই জনসমর্থন ফিলিস্তিনকে হয়তো দ্রুতই স্বাধীনতা এনে দিতে পারবে না। তবে তাদের এই আয়োজন অবশ্যই নজর কাড়বে পুরো বিশ্বের। বিভিন্ন দেশে থাকলেও কাতারই হয়ে উঠেছে তাদের জনসমর্থন তৈরির কেন্দ্রবিন্দু।
আপনার মতামত লিখুন :