লিটন কুমার দাসের তাণ্ডবে তৈরি হয়েছিল বড় সংগ্রহের মঞ্চ। সেখানে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন রনি তালুকদার। শেষদিকে তাউহীদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসানের ক্যামিওতে ২০২ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সেই লক্ষ্য ডিফেন্ড করতে নেমে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি যাদুতে শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আয়ারল্যান্ড। বুধবার (২৯ মার্চ) সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানের ব্যবধানে বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। আর এতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে সাকিব আল হাসানের দল।
লক্ষ্য ডিফেন্ড করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে লিটন কুমার দাসের উড়ন্ত ক্যাচ বানিয়ে ফেরান লিটন। ক্যাচ দেখে মনে হচ্ছিল লিটন যেন এদিন কোনো সুপার পাওয়ার নিয়েই মাঠে নেমেছেন।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আবারও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতে টাইগাররা। এবার অধিনায়ক সাকিব নিজে ফিরিয়ে দেন লরকান টকারকে। দলীয় সাত রানেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আইরিশরা।
নাসুম আহমেদের করা তৃতীয় ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে শুরুর চাপ উধাও করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছলেন হ্যারি টেক্টর। তবে দলীয়ু ২৬ রানে আরেক ওপেনার মার্ক অ্যাডায়ারকে সাকিব ফিরিয়ে দিলে আবারও চাপে পড়ে আইরিশিরা।
এরপর পাঁচ নম্বরে নামা মার্ক ডেলানি ব্যটিংয়ে এসেই সাকিবকে ছক্কা হাঁকান। তবে এক বলের ব্যবধানে তাকেও লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন সাকিব। সাকিবের তোপে পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩২ রানেই চার উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারায় চলে যায় দলটি।
তবে একপাশে আসা-যাওয়ার মিছিল চললেও অন্যপ্রান্তে লড়াই করার চেষ্টা করেছেন টেক্টর। তবে সাকিবের দাপটে অন্য কোনো আইরিশ ব্যাটাররা তাকে সঙ্গই দিতে পারেননি। নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে জর্জ ডকরেলকে ফিরিয়ে চতুর্থ শিকার করেন সাকিব। এই উইকেট নিয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্ট ক্যারিয়ারে ৪০০তম উইকেট স্পর্শ করেন তিনি।
দুই বলের ব্যবধানে আইরিশদের শেষ ভরসা টেক্টরের উইকেটও উপড়ে ফেলেন সাকিব। ৪৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে রীতিমতো গভীর পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিল আইরিশরা।
এরপর মার্ক অ্যাডায়ার ও কার্টিস ক্যাম্পার মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে দলীয় ৭৪ রানে অ্যাডায়ারকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। এতে ভেঙে যায় তাদের প্রতিরোধ।
দলীয় ৮৬ রানে অষ্টম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। প্রথম ওভারের বল ইনিংসে ১৩তম ওভারে বল হাতে নিয়েই হ্যান্ডকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন তাসকিন।
সবাই যখন আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত তখন অন্যপ্রান্তে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন ক্যাম্পার। শেষদিকে আগ্রাসী ব্যাটিং করে তাকে কিছুটা সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন হিউম। তাসকিনকে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় রিভার্স শটে ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ২৯ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন ক্যাম্পার।
তবে ফিফটি করার পরের বলেই ক্যাম্পারকে ফিরিয়ে মধুর প্রতিশোধ নেন তাসকিন। ফেরার আগে ৩০ বলে সমান তিনটি করা চার ও ছক্কায় ৫০ রান করেন তিনি। ক্যাম্পায় ফেরার নিভে যায় আইরিশদের আশার প্রদীপও।
শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ১৭ ওভার শেষে ১২৫ রানে থামে আইরিশদের ইনিংস। আর এতে করে ৭৭ রানের জয়ে সিরিজ জিতলো টাইগাররা।
এর আগে ১৭ ওভারের খেলায় পাওয়ার প্লে দেওয়া হয়েছিল পাঁচ ওভার। সেখানে প্রথম দুই ওভারে লিটন আর রনি তালুকদার মিলে তোলেন ২১ রান। তৃতীয় ওভারে আসে আরও ১৬ রান।
চতুর্থ ওভার থেকেই নিজের ভয়ঙ্কর রুপ দেখানো শুরু করেন লিটন। ওই ওভারের প্রথম তিন বলে তার ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। পরের ওভারেও একই পরিসংখ্যান। প্রথম তিন বলে লিটন হাঁকান এক ছক্কা ও দুই চার।
পাওয়ার প্লের পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৭৩ রান। এরপর ইনিংসের ষষ্ট ওভারে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আইরিশ বোলার বেঞ্জামিনের করা ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে নিজের ফিফটি স্পর্শ করেন লিটন। ফিফটি স্পর্শ করার সময়ে লিটন খেলেছেন মাত্র ১৮ বল।
এটাই এখন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। এর আগে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ বলে ফিফটি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এটাই এতদিন বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ছিল। এবার সেটাই ভেঙে নিজের নামে লেখালেন লিটন।
লিটনের সাথে রনি তাল মেলানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিনিয়ত। দুজনের তাণ্ডবে তৈরি হয়েছে নতুন রেকর্ড। দলীয় ১২৪ রানে রনি ফিরলেও এর আগেই দুজনে মিলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়েছেন। এমনকি সব জুটি মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি।
দলীয় ১২৪ রানে রনি ফিরলে ভাঙে এই রেকর্ড জুটি। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৪৩ রানের ইনিংস। রনি ফেরার পর লিটনও দ্রুত বিদায় নেন।
আইরিশ বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে লিটনের সামনে সুযোগ ছিল দেশের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার। তবে সেই সুযোগ যেন হেলায় হারান তিনি।
দলীয় ১৩৮ রানে আইরিশ স্পিনার বেঞ্জামিনের অফ সাইডের অনেক দূরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন লিটন। ফেরার আগে ৪১ বলে ১০ চার ও তিন ছক্কায় লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৮৩ রানের টর্নেডো ইনিংস।
অন্যপ্রান্তে তিন নম্বরে নামা টাইগার অধিনায়ক সাকিবও এদিন শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন। উইকেটে এসে মুখোমুখি বলেই তিনি হাঁকিয়েছেন চার। লিটন ফেরার পর হৃদয়কে নিয়ে শেষদিকেও আইরিশ বোলারদের উপর ঝড় চালিয়েছেন তিনি।
এক বল বাকি থাকতে ফিরে যান হৃদয়। ফেরার আগে ১৩ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস। অন্যপ্রান্তে সাকিব অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ২৮ রানে। শেষ পর্যন্ত ১৭ ওভার শেষে ২০২ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
আপনার মতামত লিখুন :