সন্ধ্যা থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিল হাজারখানেক মানুষের আনাগোনা। নিরাপত্তার তীব্র কোনো বলয় না থাকায় জানা-না জানা সবাই সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ। স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত মানুষদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এই নারীরা।
সাফ জিতে ফেরার পর প্রথমবারের মতো দেশে সংবর্ধনা পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান। হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল তাদেরকে একনজর দেখার জন্য।
সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন কোচ ও বাফুফে কর্তারাও। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শুরু মূল অনুষ্ঠান। এরপরেই বাজানো শহীদ মিনার চত্বরে বেজে উঠে জাতীয় সংগীত।
শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও জাতীয় সংগীতের আনুষ্ঠানিকতার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কালজয়ী গানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এরপরেই সাফজয়ী নারীদের ফুল বৃষ্টিতে সিক্ত করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর তাদের হাতে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় আইএফআইসি ব্যাংক। শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে ছিল এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর উপস্থিত সুধীজনদের বক্তব্যে নতুন করে অনুপ্রেরণা খুঁজতেই পারেন সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণারা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগান। শুধু তাই নয়, বাইরে বেরিয়ে নারীদের বিশ্বজয়ে বেরিয়ে পড়ার আহবানও ছিল তার কণ্ঠে।
তিনি বলেন, “এই মেয়েরা যখন সারা দেশের মানুষের অন্তরের মধ্যে জায়গা করে নেয় তখন আমরা নীরব থাকতে পারি না। আমরা নারীদের এই বিজয়কে শুধু ফুটবলের একটি বিজয় মনে করি না। এটাকে মনে করি নারী অধিকারের বিরুদ্ধে, সমাজকে পিছিয়ে নেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে, যারা নারীদেরকে অন্তঃপুরে আবদ্ধ করে রাখতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নারীদের সংগ্রামী বিজয় বলে মনে করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।”
শহীদবেদিতে সংবর্ধনা পেয়ে যারপরানাই খুশি অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এগিয়ে যেতে দলের জন্য দোয়াও চেয়েছেন অধিনায়ক। নারী ফুটবলের জন্য সাফ জয়কে বিশেষ কিছু বলেই উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “দেশে আসার পর থেকেই মনে হচ্ছে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি। যেভাবে মানুষ আমাদের বরণ করে নিলো নিঃসন্দেহে এটা নারী ফুটবল দলের জন্য বিশেষ দিন। নারী ফুটবল দেশের একটা সুন্দর জায়গায় অবস্থান করছে আপনাদের মনের ভেতরে। আমরা সবসময় চেষ্টা করব আপনাদের এই হাসি ধরে রাখার জন্য। আমরাও আপনাদের দোয়াপ্রার্থী, আপনাদের দোয়া পেলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল আরও এগিয়ে যাবে। আপনাদের আরও বেশি ট্রফি উপহার দিতে পারব। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এ সংবর্ধনা আমাদের জন্য বিশেষ উপহার হয়ে থাকবে। আপনাদের ভালোবাসার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
শহীদবেদিতে নারীদের এই সাফল্য উদযাপণের এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক ড. মো. সামাদ, মফিদুল হক, সারা যাকেরসহ অসংখ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।







































