আমাদের সেই সব অনুরোধের আসরের সোনায় মোড়া দুপুর নিঃশেষ হয়ে গেল। মনে আছে শনি, রোববার দুপুরে জিইসি রেডিওর সামনে খাতা-পেনসিল নিয়ে বসতাম। কারা কারা গাইতেন, নাম টুকে রাখতাম শেষের কজন থাকতেন সন্ধ্যা, লতা, হেমন্ত, মান্না, শচীন দেববর্মন। কেউ আর নেই।
রেডিও উঠেই গেছে বলা যায়। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় চলে গেলেন তাঁর গানের ইন্দ্রধনু নিয়ে। দেশভাগে ওপার থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষ তাঁদের হারানো দেশ, হারানো মাটি খুঁজে পেতেন এঁদের গানে গানে। আমাদের ভিটেমাটি, আমাদের নদী, আমাদের গ্রাম ফিরে আসত সুরে আর কণ্ঠসুধায়।
বাঙালি তখন ছিল এক হেরো জাতি। খণ্ডিত দেশ, মানুষ এপার-ওপার করছে চিরকালের মতো। সমগ্র বাঙালি জাতিই তার গর্বের জায়গা খুঁজে পেয়েছিল এঁদের গানের ভেতর। জয় করেছিল সব, এঁদের নিয়ে। এঁরা অগণিত শ্রোতার মনের ভেতরে প্রবেশ করলেন সুধাময় কণ্ঠ নিয়ে। বালক আমি গেয়ে উঠতাম, মধুর মধুর বংশী বাজে, কোথা কোন কদমতলীতে।
এঁদের সঙ্গে এলেন তরুণ, দ্বিজেন, প্রতিমা, কত সেরা কণ্ঠ। শেষ সন্ধ্যা প্রদীপটি নিভে গেল। গান থেকে গেল। রয়ে গেল সব। তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না কো প্রভু। কাজল নদীর জল থেকে উঠে এসেছিলেন এই সব কিন্নর, কিন্নরীর দল, ওগো মোর গীতিময়, সেই সাগরবেলায় ঝিনুক কুড়াতে হায়, গান গেয়ে পরিচয়। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আপনাকে প্রণাম। আবার আসবেন যদি আসা যায়। না হলে নতুন একটি তারা হয়ে জ্বলে থাকবেন ওই সন্ধ্যার আকাশে।