• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ হলে সমস্যাটা কোথায়


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৭:৩৩ পিএম
‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ হলে সমস্যাটা কোথায়

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই কথাটা নিয়ে খুব বিশ্লেষণ চলছে গত দুই তিন বছর ধরে। আগে এই কথা নিয়ে আপত্তি ছিল খালি ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের। এখন দেখি ফেসবুকে অনেক সুশীলরাও এই লাইনটা নিয়ে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন। অনেকের কথা হলো, ধর্ম যার যার উৎসবও তার তার। কথাটা মোটা দাগে সত্য হয়তো। কিন্তু এই জন্যই তো সমাজ, আমরা অন্যের দুঃখ অন্যের উৎসব, বৃহত্তর মেলবন্ধন এসবের পক্ষে থাকবো। এ জন্যেই বলা ধর্ম যার যার উৎসব সবার। যেন সবাই মিলে একটা শুভর পক্ষে থাকতে পারি। বিভাজন বিদ্বেষ তো সহজ কাজ, ঐক্য ভালোবাসা, যূথবদ্ধতা এটাই তো কঠিন।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার ছোটবেলার বার্মার শান্ত স্নিগ্ধ জীবনের সাথে এই মিয়ানমারকে মেলাতে পারেন না। কারণ সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন হিংসা ঘৃণা স্বাভাবিক, তখন তিনি দেখতেন সবার ভালোবাসা, বাঙালির সঙ্গে বার্মিজদের হৃদ্যতা, স্নেহময়তা। শিক্ষক ও পেশাজীবী হিসাবে বাঙালিদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল তখন ইর্ষণীয়। সেই মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেখতে পারে না বাঙালিদের। কত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখন স্বভূমি হারিয়ে বাংলাদেশে। এটার দায় শুধু জান্তা সরকারের নয়, জনগণের ভেতরেও আলাদা করার বা অন্য মানুষ ভাবার বাসনা। আপনি যখন একটা দেশে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতামতের মানুষকে আলাদা ভাবতে শুরু করবেন তখন থেকেই ঝামেলার শুরু। তখন মনে হবে এরা তো এই জায়গার মানুষ না, তাদের ভাষা ভিন্ন, তাদের কালচার মিলছে না। এই দেয়াল যদি বানাতে থাকেন, প্রতি বাড়িতে বাড়িতে দেওয়াল বানানো সম্ভব।  ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’—এই চেতনাটা জানান দেয়, ভিন্ন হলেও আমাদের উৎসব সবার জন্য। আপনি নিজের ধর্মকে মনে রেখেও অন্যের উৎসবকে, কালচারকে, এপ্রিশিয়েট করতে পারেন।

দার্শনিক হেগেল বলেছিলেন, “মানুষের সমাজের সবচেয়ে সৃজনশীল কাজ হলো একটা রাষ্ট্র নির্মাণ।” একটা জাতি বা কখনো অনেকগুলো জাতি মিলে একটা রাষ্ট্র নির্মাণে উন্মুখ হয়। ভাষা ধর্ম বর্ণে অনেক ভিন্নতা থাকলেও এই আধুনিক দুনিয়ায় উন্নত মানবিক একটি দেশ বানানো সম্ভব। সেই দেশ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া হলো পারস্পরিক সুন্দর সহবস্থান ও অন্যের উৎসবকে সম্মান জানানো। উৎসবকে সম্মান জানাতে হলে আপনার অংশগ্রহণ জরুরি না হলেও, নিজের রাষ্ট্রে মনে করতে হবে। এখন তো পুঁজিতান্ত্রিক সময় ও অর্থনীতির খেলা, উন্নত রাষ্ট্রগুলো জাতি ভাষা ধর্মের ভিন্নতা ভুলে একটা মানবিক বিকাশের পথ খুলে দিচ্ছে। আর আমরা আছি ক্রমাগত সংকোচনে। সরদার ফজলুল করিমের ভাই ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, সেই ব্রিটিশ আমলে। তার এক ধর্ম মা ছিলেন, যিনি সনাতন ধর্মের। সেই মায়ের বাসায় গিয়ে তিনি নামাজও পড়তেন। সেই সময় থেকে এই সময়ে এসে আমরা কত বদলে গেছি। এখন আমাদের দরকার অন্যের উৎসব, তার দুঃখে পাশে থাকার। সেখানে আমরা আছি একটি বহুলপ্রচারিত কথার খণ্ডন নিয়ে। সব মানুষকে আপন ভাবলে এসব কুবুদ্ধি মাথায় আসে না, আমি সরল মাথায় এটা অন্তত বুঝি।

Link copied!