• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পদ্মা সেতু : স্বপ্ন হলেও আজ সত্যি


সাদাত হোসাইন
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২, ০৪:১৯ পিএম
পদ্মা সেতু : স্বপ্ন হলেও আজ সত্যি

সেই এতোটুকু বয়স থেকে শুনতাম... ‘পদ্মা সেতু হইলে...’, কিংবা ‘ইশ, যদি পদ্মা সেতুটা কখনো হইতো...’!
তারপর আব্বা, চাচা বা গ্রামের কতজন যে তুমুল আফসোসের স্বরে বলে যেতেন, পদ্মা সেতু হলে কী কী হতে পারতো!

ছোটবেলায় বহুবার বাপ-চাচাদের আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলতে শুনেছি, “আরেহ, আমাগো বাড়ি কি ঢাকারতন দূরেনি? পদ্মা বিরিজ হইলে বেইন্না বেলা বাড়িরতন গিয়া ঢাকায় অফিস কইরা আবার দিনে দিনে বাড়ি ফেরন যাইবো!”

এই একটা সেতু নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, মিথ, ইমোশন ঠিক কোন পর্যায়ের, তা এ থেকেই স্পষ্ট। এই অনুভব মিলেমিশে একাকার হয়ে ছিল অসংখ্য মানুষের বুকের ভেতর! এসব শুনতে শুনতেই আমরা বেড়ে উঠি, বড় হই, আর আমাদের বাপ-চাচারা বুড়ো হন। পদ্মা সেতুর অসম্ভব স্বপ্নও রহিত হয়। এ তো কখনওই সম্ভব না। আর আমরাও তাদের মতোই মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর থেকে তিন ঘণ্টার জ্যাম ঠেলে সদরঘাট যাই, সেখান থেকে আরও দশ ঘণ্টা লঞ্চে বসে থেকে বাড়ি যাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাওয়া-আরিচা ফেরির জন্য বসে থাকি, রাত ভোর হয়ে যায়, সকাল হয় সন্ধ্যা, গভীর রাত।

এইসব চূড়ান্ত দুর্ভোগের কালে বাপ-চাচাদের সেই পৌনঃপুনিক আক্ষেপ আমাদেরও তাড়িত করে। আফসোসের দংশন আরও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে আমাদের বয়সও। সঙ্গে দীর্ঘশ্বাসও। আমাদের টগবগে তরুণ বাবা-চাচারা বৃদ্ধ থেকে প্রৌঢ় হতে থাকেন। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওই আক্ষেপ-আফসোস রয়ে যায় তেমনই। দৃঢ়। অমোচনীয়। ওই আক্ষেপ আর ঘোচে না। কখনো ঘুচবে বলেও মনে হয় না। মনে হয় এ যেন আদি ও অকৃত্রিম, অপরিবর্তনশীল এক আক্ষেপের নাম । হয়তো এই আক্ষেপ নিয়েই কেটে যাবে আমাদের জীবনও। আমাদের সন্তানদেরও। 
কিন্তু আজ চোখের সামনে আস্ত এক পদ্মা সেতুর অবয়ব দেখেও কেন যেন বিশ্বাস হতে চায় না। স্বপ্ন মনে হয়। মনে হয়, এ সত্যি তো? হ্যাঁ, সত্যিই। পদ্মা সেতু এখন সত্যি। কিন্তু সত্যি হলেও এতো  স্বপ্নেরই সেতু। স্বপ্নের পদ্মাসেতু। দুঃস্বপ্নের দীর্ঘ দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির সেতু। এই সেতু আমাদের। বাংলাদেশের। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ধন্যবাদ বাংলাদেশের মানুষ... 

পদ্মাসেতু—বাংলাদেশের স্বপ্ন, সাহস ও সক্ষমতার এক অবিনাশী  গল্প।

 

লেখক : কথাসাহিত্যিক

Link copied!