• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বাহরাইনে খুলবে পাক-ভারত ক্রিকেট জট?


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ১২:০৯ পিএম
বাহরাইনে খুলবে পাক-ভারত ক্রিকেট জট?

‘রাজনীতি’ শব্দটা ক্রিকেট সার্কিটেও চর্চিত বিষয়। কূটনীতি, সেটাও অনেক আগে থেকে আলোচিত। আর অর্থনীতি? আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি।

কিন্তু পাক-ভারত ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় রাজনীতি। প্রতিবেশী দুটি দেশের ক্রিকেট বেশি খেলা হয় রাজনীতির বাইশ গজে। রাজনীতিবিদরা নিজেদের ক্ষমতার চেয়ারটা ঠিক রাখতে ক্রিকেটকে ব্যবহার করেন। কখনো স্টেপ আউট হন। কখনো একের পর এক ডাক করে যান। যে কারণে এই দুটি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের টেস্ট বা ওয়ানডে সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি এই রাজনীতির মারপ্যাঁচে অসহায়। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে কোনো পাক-ভারত সিরিজ ছাড়াই নির্ধারিত হয়েছিল ফাইনালিস্ট। ফাইনাল। এবং চ্যাম্পিয়ন। পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো টেস্ট ছাড়াই ভারত ফাইনাল খেলল। নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হলো। তাদের গায়ে এঁটে দেওয়া হলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমা।

দুই দেশের মানুষের ক্রিকেটীয় আবেগকে পুঁজি করে রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্কোর বড় করে যাচ্ছেন। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু পাক-ভারত টেস্ট সিরিজ। এ পযর্ন্ত দুই দেশ ৫৯ টেস্ট খেলেছে। সেটা খেলেছে তারা দুই দেশের পাশাপাশি এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের একটা ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশে। ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরে প্রথম টেস্টও হয়েছিল ঢাকায় সেই ১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে। তারপর ‘ভারত-পাকিস্তান’ সিরিজে ছোঁড়া হয়েছে রাজনীতির বাউন্সার। বিমার। গুগলি। ফ্লিপার। কত কিছু। ২০১২ সালের পর দুটি দেশ দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজ খেলেনি। কারণ, দুই দেশের রাজনীতিবিদদের অনিচ্ছা।

এ বছর এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ নিয়ে পাক-ভারত ক্রিকেট সম্পর্ক নতুন এক ’ক্রসরোডে’ এসে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি বিশ্বকাপ। তার আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এশিয়া কাপ। ভারত বলেছে তারা পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলতে যাবে না। কারণ, সরকার থেকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের কোনো সবুজ সংকেত নেই। জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ভারত এশিয়া কাপ খেলতে না এলে পাকিস্তানও ভারতে যাবে না বিশ্বকাপ খেলতে। তাহলে কি এশিয়া কাপ ভারতকে ছাড়া আর বিশ্বকাপ পাকিস্তানকে ছাড়াই হবে?

মনে হয় না। কারণ, অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে বলা যায় কূটনৈতিক সমাধানের মধ্য দিয়ে হলেও বাইশ গজে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে। আর সেই সমাধান সূত্র খুঁজতেই হয়তো ৪ ফেব্রুয়ারি বাহরাইনের রাজধানী মানামাতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বার্ষিক সভার পাশাপাশি পাক-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হবে। পাকিস্তান ক্রিকেটে বোর্ডের সভাপতি নাজাম শেঠি এবং ভারতীয় ক্রিকেটে বোর্ডের সচিব তথা দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ‍‍`র ছেলে জয় শাহ‍‍`র বৈঠকের দিকে তাকিয়ে থাকবে ক্রিকেট বিশ্ব। মানামা বৈঠকে খুলতে পাবে পাক-ভারত ক্রিকেট জট। বিশ্বকাপে পাকিস্তান অংশ না নিলে ক্রিকেটীয় আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন দর্শকরা। কিন্তু আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে আইসিসি। বিসিসিআই। এবং অবশ্যই অবশ্যই পিসিবি।

আর্থিক সংকটের কারণে আগামী দিনে বিপন্ন হতে পারে পাকিস্তান ক্রিকেট। সেটা ভালো করেই জানেন সবাই। দুনিয়াজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। তার ধাক্কা ক্রিকেটেও লাগবে। কোন দেশ সেটা কীভাবে সামাল দেবে, তার পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গেছে। তাই মানামা বৈঠকে শেঠি-শাহ‍‍`রা পাক-ভারত ক্রিকেটের শীতল সম্পর্কে খানিকটা উষ্ণতা ছড়ানোর পন্থা খুঁজবেন। আপাতত বন্ধ দরজা খোলার একটা বিকল্প চাবি তারা তৈরি করতেই পারেন। যদি এই আশাবাদটাই সত্যিই হয়, তাহলে মানামা বৈঠকের গায়েও লেগে যাবে ‘ঐতিহাসিক সভা’র তকমা।

আপাতত প্রায় এজেন্ডাহীন এশিয়ান ক্রিকেটে কাউন্সিলের সভার অলিখিত বড় এজেন্ডা অবশ্যই পাকিস্তান-ভারত ক্রিকেট সম্পর্ক উন্নয়নের ফর্মুলা খোঁজা। সমাধান সূত্র মানামা বৈঠক থেকে বের হোক বা না হোক ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কের নামানো ঝাপটা টেনে তোলার চেষ্টা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ক্রিকেট নিয়ে আপনি রাজনীতি করতে পারেন। কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু টাকা না থাকলে চলমান বিশ্বে ক্রিকেট চালানোই কঠিন। অর্থ ছাড়া আধুনিক ক্রিকেট অর্থহীন। ডলারের ঔজ্জ্বলেই পাক-ভারত ক্রিকেট সম্পর্কের আকাশে নতুন আলোর রুপালি রেখা দেখা যেতে পারে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Link copied!