• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্রাজিলিয়ান ফুটবল-শিহরণ এবং রিচার্লিসন


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২, ০১:১৬ পিএম
ব্রাজিলিয়ান ফুটবল-শিহরণ এবং রিচার্লিসন

একটা শট। ফুটবলীয় পরিভাষায় যাকে বলা হবে, ‘বাইসাইকেল কিক’। রিচার্লিসনের ওই একটা কিক বুঝিয়ে দিল বিশ্বকাপ এলে কেন মানুষ ব্রাজিল ব্রাজিল বলে আবেগে ভাসে! ফুটবল সভ্যতার মর্মভেদী চিৎকারের নামই হচ্ছে ব্রা-জি-ল! সার্বিয়ার বিপক্ষে রিচার্লিসনের দুই গোল শিল্পসমৃদ্ধ ব্রাজিলয়ান সেই সভ্যতার কথা মনে করিয়ে দিল।

সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের রাস্তাটা আগেই তৈরি করেছিলেন ওই রিচার্লিসনই। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর যাদের মনে শঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছিল আরেকটা অঘটনের, সেই শঙ্কা উড়ে গেল দ্বিতীয়ার্ধে হলুদ শর্ষেক্ষেতে সাম্বা নাচে। পরপর দুটো গোল করলেন রিচার্লিসন। প্রথমটা ব্রাজিল সমর্থকদের আশঙ্কামুক্ত করার। আর দ্বিতীয়টা? কেন মানুষ ব্রাজিলয়ান ফুটবল দেখতে রাত জাগবে তার বড় বিজ্ঞাপন। এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোল। আগামী বেশ কিছুদিন ব্রাজিল সমর্থকেরা এই গোল নিয়ে চর্চা করবেন। করাটা স্বাভাবিক। কারণ, ও রকম একটা গোল দেখতে হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা যায়। সার্বিয়ান বক্সে পায়ের জঙ্গল। তার মধ্যে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ক্রসটা রিচার্লিসন ধরলেন। তাকে ঘিরে রেখেছিলেন তিন সার্বিয়ান ফুটবলার। কিন্তু বলটা বাতাসে ভাসা অবস্থায় পায়ে নিলেন রিচার্লিসন। তারপরই শিহরণ জাগানো সেই বাইসাইকেল কিক! ওটাকে তখন আর ফুটবলের কোনো মুহূর্ত মনে হয়নি! মনে হয়েছে কোনো এক জাদুকরের জাদু! যারা দেখেছেন তাদের চোখে ওই গোলের রেশ হয়তো লেগে থাকবে আরও অনেক দিন! মহাভারতের অর্জুনকে বাঙালি যত ভালোবাসে তার চেয়ে বেশি হৃদয়ে স্পন্দন তোলে কর্ণের জন্য। সার্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের এই ম্যাচ সে রকম কিছুর বার্তা দিয়ে গেল! এ বিশ্বকাপে বাঙালির ব্রাজিলিয়ান আবেগ বহমান নেইমারকে ঘিরে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে নেইমার নন, বাঙালির হৃৎস্পন্দনে যে শব্দ শোনা গেল সেটা ‘রিচার্লিসন’!

ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই কাতারের গ্যালারিজুড়ে আবেগের শর্ষেক্ষেত। কিন্তু প্রথমার্ধে গোল নেই! অজানা শঙ্কায় গ্যালারি আর গ্যালারির বাইরে সব হলুদ অদৃশ্য ধূসর হয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। ব্রাজিলের ম্যাচ মানে দলের সঙ্গে অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে হাজির সমর্থকদের বিশাল ঝাঁক। শুধু সমর্থন নয়, চিৎকার, মাদকতায়, প্রভাবে তারা রীতিমতো এক রেজিমেন্ট। আর গোটা বিশ্বজুড়ে ও রকম আরও হাজার হাজার রেজিমেন্ট। কেউ রাত জেগে টিভির সামনে। কেউ ব্রেকফাস্ট সেরে ডাউনিং টেবিলে। কেউ বিয়ারের গ্লাস হাতে নৈশ ক্লাবে। বৃহস্পতিবারও তার থেকে আলাদা কিছু ছিল না। আর এই বাংলাদেশে ব্রাজিলের জন্য ফুটবলীয় আবেগ উপুড় করে দিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে রাত জেগেছেন কয়েক কোটি মানুষ! তাদের জন্য হাজার হাজার ড্রাম ফুটবলীয় রোমাঞ্চ ঢেলে দিলেন রিচার্লিসন। একবার নয়, দুই-দুবার।

সার্বিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ শেষে গোটা ব্রাজিল দল দৌড়ে গেল গ্যালারির ফেন্সিংয়ের দিকে। সেখানেও দল বেঁধে নাচ! মাঠের সাম্বার জন্য যদি নেইমার-জেসুজ-ভিনিসিয়ুসদের যদি প্র্যাকটিস করিয়ে থাকেন তিতে, তাহলে ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাস আর উদ্যাপন মনে হয় ব্রাজিলিয়ানরা পেয়ে যান জন্মসূত্রে! ভিকট্রি ল্যাপ, জয়োৎসব এসবের জন্যই তো হলুদ-সবুজের জার্সিটা গায়ে জড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বড় হয় তারা।

কিন্তু বিশ্বকাপে চূড়ান্ত জয়োৎসবের জন্য ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারে থাকতে হবে ব্রাজিলকে। কিন্তু তার জন্য গতি, স্কিল আর পাওয়ারের পাশাপাশি কোনো না কোনো ফুটবলারের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ মিলতে হবে। যেমন সার্বিয়ার বিপক্ষে সব ছাপিয়ে ব্রাজিলের এক্স ফ্যাক্টরের নাম—রিচার্লিসন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Link copied!