মুসলিম বিবাহ রীতি ও ইসলামি নীতি অনুযায়ী নারীর মোহরানা স্বামীর পক্ষ থেকে শ্বশুর, ভাই বা যেকোনো আত্মীয় পরিশোধ করতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২৩ মার্চ) ‘জিয়াউল হক ও অন্যান্য বনাম ফারহানা ফেরদৌসী ও অন্যান্য’ শিরোনামে মামলায় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন পর্যবেক্ষণ দেন।
এছাড়া ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ওই আদেশের ২১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, স্বামীর পাশাপাশি তার পক্ষে তার যেকোনো অভিভাবক মোহরানা পরিশোধ করতে পারবেন। আর মোহরানা হিসেবে জমি দেওয়া হলে তা পাওয়ার জন্য পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারবেন স্ত্রী। অর্থাৎ পারিবারিক আদালতে মামলা করে স্ত্রী সেই জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
এদিন আদালতে জিয়াউল হকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুরজিৎ ভট্টাচার্য। ফারহানা ফেরদৌসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম আলী মুর্তজা।
মামলায় আদালতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ এবং বায়তুল মোকাররমের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী।
এ মামলায় তারা লিখিত ও মৌখিকভাবে বক্তব্য পেশ করে আদালতকে সহযোগিতা করেছেন।
এসব বিষয়ে আদালতে অ্যামিকাস কিউরিরা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেছেন, মোহরানার ক্ষেত্রে এই ধরনের জমি হস্তান্তর-ইসলামী নীতি অনুসারে বৈধ মোহরানা।
এছাড়া অ্যামিকাস কিউরিরা তাদের মতামতে বলেছেন, এটি ঋণ বা দেনা যেকোনো আকারে হতে পারে। এছাড়া মোহরানার পরিশোধ নগদ বা সম্পত্তি বা অন্য কোনো মূল্যবান জিনিসপত্রের আকারেও হতে পারে। এটি স্ত্রীর অধিকার। বিয়ের সময় বা তার পরে স্ত্রীর অনুকূলে মোহরানা প্রদান বা হস্তান্তর করতে স্বামীর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অ্যামিকাস কিউরিদের মতে, এটা আল্লাহর হুকুম এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশ যে, মোহরানা অবশ্যই স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে এবং যতক্ষণ না পরিশোধ করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা স্বামীর ওপর ঋণ বা দায় হিসেবে বজায় থাকবে।
অ্যামিকাস কিউরিদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জিনিসপত্র, যা ইসলামে বৈধ, তা মোহরানার রূপ নিতে পারে এবং যে কেউ এই দেনমোহর প্রদান বা হস্তান্তর করার দায়িত্ব নিতে পারে।
আদালত আরও বলেছেন, ইসলামিক পণ্ডিতদের উপরোক্ত মতামত থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে ভূমি সম্পত্তি, ইসলামের অধীনে একটি বৈধ সম্পত্তি হওয়ায় ইসলামী নীতির অধীনে তা মোহরানা রূপ নিতে পারে এবং স্বামীর পিতাসহ যে কেউ অর্থ প্রদানের দায়িত্ব নিতে পারে। ইসলামী পণ্ডিতদের মতামত অনুসারে, এই ধরনের জমি হস্তান্তর-ইসলামী নীতি অনুসারে বৈধ মোহরানা হিসেবে বিবেচিত হবে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মোহরানার বিপরীতে দেওয়া জমি পেতে সুনামগঞ্জের বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত স্ত্রীর পক্ষে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট স্বামীর আপিল গ্রহণ না করে তা নিষ্পত্তি করে দেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্বামীর পক্ষে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলা এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।