রাজধানীর পান্থপথে সংবাদকর্মীকে চাপা দেওয়া সেই ময়লার গাড়ির চালক সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত কর্মচারী ছিলেন না বলে জানিয়েছে র্যাব। এমনকি তার ভারী যান চালানোর কোনো লাইসেন্স ছিল না বলেও জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনী।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের (৪৬) মৃত্যুর ঘটনায় ডাম্প ট্রাকটির চালক মো. হানিফ ওরফে ফটিককে (২৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার মো. হানিফ কুমিল্লার ওয়ারী টিএসও এলাকার সিটিপল্লী গ্রামের মো. কামাল মিয়ার ছেলে। তিনি ডিএনসিসির গাড়ি মেরামত ওয়ার্কশপের মূল মেকানিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার হানিফ মেকানিকের সহযোগী হলেও ডিএনসিসির গাড়ি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যের সুবাদে ছয়-সাত বছর ধরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হালকা ও ভারী যানবাহন চালিয়ে আসছেন। এক বছর ধরে তিনি ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাক চালাতেন। তবে তিনি সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত কোনো কর্মচারী বা চালক ছিলেন না। এমনকি তাকে কোনো নির্দিষ্ট বেতনও দেওয়া হতো না।
কমান্ডার মঈন আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের গাড়ি মেরামত করে পাওয়া বকশিশ এবং বরাদ্দকৃত তেল থেকে বেচে যাওয়া অতিরিক্ত তেল চুরিই ছিল তার আয়ের উৎস। তার হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও ১০ চাকার ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার হানিফ জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলীতে ময়লা পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। সকালে দুইবার ময়লা নিয়ে যাওয়ার পর তৃতীয়বারের সময় পান্থপথে তিনি ওই মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন তাকে ধাওয়া করলে গ্রিন রোড সিগন্যাল পর্যন্ত গিয়ে কৌশলে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যান। পরে লোকাল বাসে করে প্রথমে গাবতলী এবং সেখান থেকে সদরঘাট হয়ে চাঁদপুরের হাইমচরে গিয়ে আত্মগোপন করেন।
গত বৃহস্পতিবার মগবাজারের বাসা থেকে রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থল মিরপুরের যাচ্ছিলেন দৈনিক সংবাদের সংবাদকর্মী আহসান কবির খান। পথে দুপুর আড়াইটার দিকে পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের উল্টো দিকে এলে ডিএনসিসির একটি মায়লার গাড়ি তাকে চাপা দেয়। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভীন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন।
এর আগে গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় মারা যান নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৭)। এই ঘটনায়ও ময়লার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মূল চালকের সহকারী মো. রাসেল। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাড়িটির মূল চালক মো. হারুন ও সহকারী রাসেলকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দুজনের কারোই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না বলে জানিয়েছে র্যাব।