দেশে এখন করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের ৮২ শতাংশেরই নতুন ধরন ওমিক্রন। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে ওমিক্রনে সংক্রমণের হার অনেক বেশি হলেও মৃত্যুর হার কম বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল হাসপাতালে যারা গেছেন, তাদের ২০ শতাংশ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এই সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত কোভিড-১৯-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য বলেন, “করোনাভাইরাসের সব ধরনই বিপজ্জনক এবং এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশন আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ও টিকা নিতে হবে।”
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “কোভিড -১৯-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (এসএআরএস) CoV-2 এর জিনোমের গঠন উন্মোচন ও পরিবর্তনের ধরন এবং বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে আন্তসম্পর্ক বের করা, ভাইরাসের বিবর্তনীয় সম্পর্ক, রোগের উপসর্গ, রোগের প্রখরতা, তুলনামূলক হাসপাতাল অবস্থানের মেয়াদকাল এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জিনোম ডেটাবেইস তৈরি করা। আন্তর্জাতিক সিকোয়েন্সিং ডেটাবেইস জিন ব্যাংক বিএসএমএমইউর ৯৩৭টি ভাইরাল জিনোম জমা দেওয়া হয়েছে।”
গবেষণায় বলা হয়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিএসএমএমইউতে মোট ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগের রোগীর মধ্যে ৮২ শতাংশের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত। যেখানে ১৮ শতাংশ মানুষের শরীরে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। আর শুধু বহির্বিভাগের রোগীদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ ওমিক্রনে সংক্রমিত। তাদের মধ্যে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট তিনটি ধরণ পরিলক্ষিত হয়েছে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ওমিক্রনের বিএ.টু (BA.2) ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি সংক্রামক।
বলা হয়, ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রনে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট জিনোমের ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে। যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে হয়েছে। এ স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়ে থাকে। স্পাইক প্রোটিনের গঠনগত বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
গবেষণার পর্যবেক্ষণে আরও দেখা যায়—
* ওমিক্রন এখন দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রধান উৎস, কিছুদিন আগে ছিল ডেলটা।
* তৃতীয়বারের মতো আক্রান্ত হয়েছেন এ রকম রোগীরও ওমিক্রন পাওয়া গেছে।
* হাসপাতালে ভর্তি রোগী জিনোম সিকোয়েন্স করে এ পর্যন্ত মোট ৬৫ শতাংশ রোগীতে ওমিক্রন এবং ৩৫ শতাংশ রোগীতে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
* মৃদু উপসর্গের কারণে ওমিক্রন রোগীদের থেকে দ্রুত সংক্রমণ প্রবণতাও রয়েছে।
* ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে কম মাথাব্যথা এবং সর্দির মতো উপসর্গ থাকে।
* ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা কম।
* এ গবেষণা জিনোমিক ডেটাবেইস থেকে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএসএমএমইউর কোভিড-১৯-এর ৯৩৭টি জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ রিপোর্ট বিএসএমএমইউর চলমান গবেষণার সাড়ে সাত মাস ফলাফল।
এদিকে বিএসএমএমইউর গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়সী রোগী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী রোগীদের সংখ্যা বেশি। শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আক্রান্তের হার ৪৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ শতাংশ নারী রয়েছেন।
কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের রোগের প্রখরতা বেশি। এছাড়া মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ভ্যাকসিন নেননি তাদের হার বেশি।