• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইসেন্স ছিল না ৫ ভাইকে চাপা দেওয়া সেই চালকের


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২, ০৩:৪০ পিএম
লাইসেন্স ছিল না ৫ ভাইকে চাপা দেওয়া সেই চালকের

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মৃত বাবার শ্মশানে পূজা শেষে ফেরার পথে পিকআপের চাপায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। দুই বছর ধরে পিকআপ, চাঁন্দের গাড়ি, তিন টন ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়ে এলেও তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এর আগে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫। এ সময় তার কাছ থেকে ঘাতক পিকআপটির চাবি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার সাইফুল বান্দরবানের লামা উপজেলার মো. আলী জাফরের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চকরিয়ায় পাঁচ সহোদরকে পিকআপ চাপা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাট নামক স্থানে বেপোরোয়া গতির পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলে মারা চান চার সহোদর। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও তিন ভাইবোনকে হাসপাতালে নিলে সেখানে মারা যান আরও এক ভাই। বাকি এক ভাই বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে এবং অন্য বোন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

নিহত ৫ ভাই হলেন অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৪)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন বোন হীরা সুশীল ও ভাই রক্তিম সুশীল।

খন্দকার আল মঈন জানান, হতাহতরা মৃত বাবার শ্মশানে পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন কক্সবাজারগামী বেপরোয়া গতির ওই পিকআপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মূল সড়ক থেকে নেমে গিয়ে তাদের চাপা দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় নিহতদের ভাই প্লাবন সুশীল (২২) বাদী হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা পিকআপ চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে এবং ঘাতক পিকআপ চালককে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাবের এই পরিচালক আরও জানান, গ্রেপ্তার সাইফুলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তারপরও দুই বছর ধরে তিনি পিকআপ, চাঁন্দের গাড়ি, তিন টন ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। এ দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগে তিনি দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরির ভিত্তিতে পিকআপটি চালানো শুরু করে। এর আগে তিনি বান্দরবানের লামাতে একটি রাবার বাগানে চাকরি করতেন।

পিকআপ মালিকের নির্দেশে দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালান সাইফুল

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানিয়েছেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে পিকআপ মালিকের ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউলকে নিয়ে তিনি চকরিয়া থেকে কক্সবাজারে সবজি পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হন। রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকলেও দ্রুত সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য তিনি বেপোরোয়া গতিতে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। যার কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষারতদের তিনি দূর থেকে লক্ষ্য করতে পারেননি। কাছাকাছি আসার পর রাস্তার পাশে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেও অধিক গতির কারণে পিকআপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাদের চাপা দেন। এ সময় তার গাড়ির গতি ছিল ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। পরে নিহতদের দেখার জন্য তিনি গাড়ি থেকে নামলেও মালিকের ছেলের নির্দেশে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, দুর্ঘটনার পর সাইফুল মালুমঘাট বাজারের একটি স্থানে পিকআপ থামিয়ে মালিক মাহমুদুল করিমকে ফোন দেন এবং ঘটনা খুলে বলেন। তখন পিকআপের মালিক তাকে পিকআপটি পরের কোনো স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। নির্দেশনা অনুযায়ী সাইফুল ডুলাহাজরায় এসে পিকআপটি রাখেন এবং লোকাল বাসে করে চকরিয়া গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করেন। তখন পিকআপের মালিক তাকে ন্যূনতম এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে প্রথমে তিনি তার আগের চাকরিস্থল বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপনে যান। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে আসেন।

পিকআপের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট ছিল না

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, পিকআপের মালিক মাহামুদুল করিম মূলত সবজি পরিবহনের ব্যবসা করেন। তিনি চকরিয়ার সবজির আড়ত থেকে কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী এলাকায় সবজি সরবরাহ করতেন। তার ছেলে তারেক সবজি সরবরাহের তদারকি করতেন এবং ভাগিনা রবিউল তারেকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৬ সালে তিনি দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপটি কেনেন। মূলত সবজি পরিবহনের উদ্দেশ্যেই পিকআপটি ব্যবহার করা হতো। চার বছর ধরে পিকআপের ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন এবং গত তিনি বছর ধরে রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। দুর্ঘটনার পর থেকে পিকআপের মালিক, তার ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল আত্মগোপনে রয়েছেন।

Link copied!