রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাজারসহ দেশীয় বাজারে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। আর এই লাগামহীন বাজারে গত বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট পেশের কয়েক মিনিটের মধ্যই হঠাৎ করে বেড়েছে ভোজ্যতেলের বাজার। এছাড়া বাজেটের প্রভাব পড়েছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামেও। বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, আলু, ডাল, শুকনা মরিচ ও কিছু সবজির দাম বেড়েছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায় লাগামহীন নিত্যপণ্যর বাজার। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চাল ও ডিমের বাজার লাগামহীন।
লিটারে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা। আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা দাম ২০৫ টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৯৯৭ টাকা। এক লিটার খোলা পাম তেলের দাম হলো ১৫৮ টাকা।
আরেকদিকে হঠাৎ অস্থির চালের বাজার। বছরের এ সময়ে দাম যেখানে কমতির দিকে থাকে, সেখানে এবারের চিত্র উল্টো। সপ্তাহ ব্যবধানে চিকন-মোটা সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩-৬ টাকা এবং ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭০ টাকায়, নাজিরশাইল ৭৫-৮৫ টাকায়, ব্রি-২৮ ৫৫-৫৮ টাকায় আর পোলাওয়ের চালের দাম পড়ছে ১১০-১১৫ টাকা।
এছাড়া বেড়েছে ডিমের দামও। ১২০ টাকা ডজনের ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর দেশি মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে এই ডিমের ডজন ১২০ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া দেশি মুরগির ডিম প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এর ফলে ডজনের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকায়। কোথাও তা ১৯০ থেকে ২০০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনকার এ খাবারের এমন চড়া দাম দেখে অবাক ক্রেতারা।
কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা, দেশি রসুন ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ ও চায়না রসুন ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা এবং হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২২৪০ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৯০, টমেটো বিক্রি হচ্ছে মান বেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০, শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০, পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০, করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০, মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০, কাকরল বিক্রি হচ্ছে ৬০, কচুরমুখী বিক্রি হচ্ছে ৪০, পটোল বিক্রি হচ্ছে ৩০, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। কেজিতে তিন টাকা বেড়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা দরে।
বাজারে প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের তেলাপিয়া ১৮০-২০০, চাষের কই ১৮০-১৯০, পাঙাশ ১৬০-১৮০, শিং ৩০০-৪৬০, শোল ৪০০-৬০০, পাবদা ৩০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতা খালেকুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, প্রতিদিন সকালের নাশতায় ডিম তো নিয়মিত খাবার। এছাড়া অন্যান্য সময়েও খাওয়া হয়। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে ডিম খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
আরেক ক্রেতা জাকির হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, কম আয়ের মানুষদের জন্য ডিম সুলভ খাবার। আমরা যারা ব্যাচেলর বা পরিবার থেকে দূরে থাকি, তাদের খাবারের তালিকায় ডিমই আগে থাকে। এভাবে দাম বাড়লে তো ডিম খাওয়া ছাড়তে হবে।
আক্ষেপের সুরে জালাল উদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষ কীভাবে চলবে। আমরা বেতন পাচ্ছিই-বা কত আর সংসার চালাব কীভাবে। তা ছাড়া আমাদের তো নানা খরচ রয়েছে। আমরা নিরুপায়। আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
হঠাৎ চালের দাম নিতে শাহাবুদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলন, নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে এবার চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুব সমস্যায় পড়ে গেছি। যেই মূল খাদ্য খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি সেই খাদ্য কিনতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
একই কথা জানান নুর নবী নামে আরেক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে অভিযোগ করে বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। আমাদের বাজার করতে যে অবস্থা তাতে ভাবছি, নিম্নবিত্ত পরিবার তাহলে কী করছে। বাজারে চাল, ডালসহ সব নিত্যপণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। সরকার যদি এ বিষয়টি নজরে নিয়ে একটা সঠিক ব্যবস্থা নেন তাহলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো একটু বাঁচবে।
আপনার মতামত লিখুন :