বইমেলায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। বিষয়টিকে মাথায় রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলা- ২০২২-এর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
বইমেলায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের পরে জঙ্গিরা ক্ষিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক বলে আমরা মনে করছি। আমাদের যে মিটিং হয়েছে সেখানেও আমরা এই বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। তবে তাদের মূল নেতা মেজর জিয়া এখনো বাইরে আছে। ফলে আমরা এই ঝুঁকিটিকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। আমরা এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উস্কানিমূলক বইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন আমাদের লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে হঠাৎ করে কিছু আপত্তিকর বই চলে আসে। তখন এটা নিয়ে হইচই শুরু হয়। আমরা আমাদের প্রস্তুতি মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আসলে বাংলা একাডেমিতে প্রতিদিন যে শতশত বই প্রকাশিত হয় সে বই মনিটরিং করা প্রায় অসম্ভব। এতোগুলো বই পড়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে সিটিটিসি ও ডিবির পক্ষ থেকে লোক থাকবে। প্রতিদিন কি বই আসছে সেটি আমরা আলাদা করে মনিটরের ব্যবস্থা করবো। এখন রাতের বেলা যদি কেউ বই এনে রাখেন তাহলে সে দায় স্টল মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে।”
নিরাপত্তার বিষয়ে কমিশনার আরো বলেন, “বইমেলায় নিরাপত্তা দেওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি অন্যতম বৃহৎ কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে মূল মেলা কেন্দ্রিক একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শহীদ মিনার, টিএসসি, শাহবাগ ও নীলক্ষেত এলাকায় আমাদের প্রাথমিক একটি তল্লাশি দল থাকবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবে। এদিকে যাতে কোনো গাড়ি প্রবেশ না করে তা তারা নিশ্চিত করবেন।”
একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি প্রবেশ ও একটি বহির্গমন পথ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারটি প্রবেশ ও চারটি বহির্গমন পথ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে গেইট স্থাপন করা হবে, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শরীর তল্লাশি করা হবে। পাশাপাশি কাউকে সন্দেহ হলে, তাকে আলাদা কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ মেলার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছে। শুধু মেলা প্রাঙ্গণ নয়, মেলার আশপাশে যে সকল রাস্তা আছে, যে সকল রাস্তা ব্যবহার করে দর্শনার্থীরা মেলায় আসবেন সেগুলোও সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।”
মেলার ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকে এবং ইউনিফর্মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন জানিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “ডিবি ও সিটিটিসি টিম এখানে কাজ করবে। মোটরসাইকেল ও পিকআপ দিয়ে মেলার চারদিকে টহলের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বোম ডিসফোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে এবং আমাদের সোয়াতের ভ্যান ও সিআইডির পক্ষ থেকে ক্রাইম সিন ভ্যান থাকবে। অগ্নি নির্বাপণসহ যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবে। দর্শনার্থীদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম থাকবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে মেলার বিভিন্ন স্থানে খাবার পানি সরবরাহ করা হবে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ভেতরে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান করার জন্য একটি ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ আমরা তৈরি করে দেবো। যাদের দুগ্ধপোষ্য শিশু আছে তারা আমাদের এই কন্ট্রোল রুমে এসে তাদের শিশুদের দুধ পান করাতে পারবেন।”
ডিএমপির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নিয়মিত মেলা প্রাঙ্গণে এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করবেন বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানারা বিষয়ে যেসব নির্দেশনা আছে, সেগুলো প্রতিপালনের বিষয়ে আমরা কড়াকড়ি করবো। মাস্ক না পরে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না। পাশাপাশি মেলায় প্রবেশের আগে সকলের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা রাখা হবে। মেলার ভেতরেও মোবাইল টিম রাখা হবে, যাতে ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই মাস্ক পরেন। স্টলে যারা থাকবেন তাদের প্রত্যেককে করোনার টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে, তা না হলে তাদের জরিমানা করা হবে এবং তারা যাতে মেলায় না থাকে সেটির ব্যবস্থা করা হবে।”