• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ধর্মের নামে প্রতারণা, গ্রাহকের ২০০ কোটি টাকা উধাও


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২২, ০৪:১৯ পিএম
ধর্মের নামে প্রতারণা, গ্রাহকের ২০০ কোটি টাকা উধাও

শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যবসাকে প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে বিনিয়োগে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শাহ আলমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (১২ মার্চ) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে নরসিংদী ভেলানগর এলাকায় গোপন বৈঠক চলাকালীন সময়ে প্রতারক চক্রের হোতা মো. শাহ আলম (৫০) ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চার সহযোগীরা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪) মো. সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও আ. হান্নান মোল্লাহকে (৩০)।

রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, “২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই গা ঢাকা দিলে বিষয়টি নরসিংদী জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নরসিংদী জেলার পলাশ থানা পুলিশ প্রাথমিকভাবে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ শেষে বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নরসিংদীর পলাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরেও অভিযোগ প্রদান করে। সংঘটিত ঘটনায় ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার প্রত্যাশায় লিখিত অভিযোগ নরসিংদীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর কার্যলয়ে এসে জমা দেয়। এরপর র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।”

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের প্রায় তিন শতাধিক কর্মী রয়েছে। যাদেরকে কোন প্রকার বেতন প্রদান করা হয় না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এককালীন ১০% ও বছরান্তে ৬% অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হতো। গ্রেপ্তাররা বিনিয়োগকারীদেরকে বার্ষিক ১২ থেকে ১৬% মুনাফার প্রলোভন দেখাতো। এছাড়াও তারা গ্রাহকদের নিকট হতে উচ্চ মুনাফায় মাসিকভিত্তিতে ডিপিএস-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত বলে জানায়। যার কারণে তারা গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম হন। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন প্রদান করে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতই গ্রাহকদের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করত। গ্রাহকদের সংগৃহীত অর্থ ল্যান্ড প্রজেক্ট টেক্সটাইল ও নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বলে জানায়।”

তবে গ্রাহকদের তথ্যমতে সংগৃহীত টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে র‌্যাব।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, “করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয়; তখন ভুক্তভোগীরা তাদের আমানতকৃত টাকা শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নিকট উত্তোলনের আবেদন করে। তখনই তারা করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন অজুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫ থেকে ৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭ থেকে ৮ একর জমি রয়েছে বলে জানা যায়। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।”

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এই র‍্যাবের কর্মকর্তা।

Link copied!