• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

গণপরিবহনে দিনে কড়াকড়ি, রাতে শিথিল


আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৯:৫৫ পিএম
গণপরিবহনে দিনে কড়াকড়ি, রাতে শিথিল

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। চলতি মাসের ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এ বিধিনিষেধ কার্যকর। প্রজ্ঞাপনে সবধরনের গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা বলা হলেও পরে ‘যত আসন তত যাত্রী’ বহনের কথা জানানো হয়। শর্ত ছিল বাসের চালক-হেলপারদের স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং করোনা টিকা সনদ সঙ্গে থাকতে হবে। অর্থাৎ করোনার টিকা নিতে হবে। আর বাস বা সব ধরনের গণপরিবহণের যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবে রাজধানীর বাসগুলোতে সেই নিয়ম মানাতো হচ্ছেই না, বরং প্রতিদিনের মতো গাদাগাদি করেই চলাচল করছেন যাত্রীরা। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে দিনে কড়াকড়ি থাকলেও রাতে তেমন সমস্যা হয় না বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মগবাজার, সাতরাস্তা মোড়, মহাখালী, মালিবাগ, কাকরাইল, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর, পল্টন ও কারওরান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহনে সম্পূর্ণ আসনে যাত্রী নেওয়ার পর দাঁড়িয়ে আবার কোনো কোনো বাসের গেটে ঝুলেও যাত্রীরা গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। আর নির্দেশনা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেখা যায়নি অধিকাংশ পরিবহনেই। তবে কিছু কিছু বাসে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতেও দেখা গেছে। বেশিরভাগ বাসচালক-হেলপারদের মুখে মাস্ক না থাকার চিত্রটি দেখা যায়। আবার দেখা গেছে অনেক যাত্রী মাস্ক ব্যবহার করছেন না।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে দেখা যায়, গণপরিবহনের অধিকাংশ বাসগুলোতে মানুষ ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠছেন এবং স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেই চলাচল করছে বেশিরভাগ বাসগুলো।

কয়েকজন বাসচালক জানান, দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান থাকে, তাই একটু সতর্ক থাকতে হয়। সন্ধ্যার পর লোকজন বেশি থাকে এবং আমাদের ইনকামও ভালো হয়। কারণ এসময় কোনো অভিযান থাকে না। আর ট্রাফিক পুলিশেরও কোনো চাপ থাকে না।  ​

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক না পরায় আজমেরী পরিবহন বাসের বিরুদ্ধে ৬ হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে আরেকটি বাসকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া পথচারী ও গণপরিবহনে যাত্রীদের মাস্ক না থাকায় অনেককেই সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়।

এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস সংবাদ প্রকাশ-কে বলেন, “এখনও মানুষ মাস্ক না পরার বিষয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। আমরা যতটুকু সম্ভব লোকজনদের সচেতন থাকার কথা বলছি। নতুন সরকারি নির্দেশ মেনে মাস্ক পরে চলাফেরার পরামর্শ দিচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা লোকজনকে সতর্ক করছি। তবে আগের চেয়ে মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “পথচারী এবং গণপরিহনের চালক-হেলপার যারা মাস্ক পরেনি সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও বাসচালক-হেলপারদের করোনার সনদ, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কী না সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে।” 

গণপরিবহনগুলোতে যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না তার প্রমাণ মিলছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছেও। রাজধানীতে বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকা ও যাত্রীদের মাস্ক না পরায় জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে অভিযান। এসময় পৃথক ১৬টি মামলায় ১২ হাজার পাঁচ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে গত কয়েক দিন ধরে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার মহাখালী বাস টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন মনিরা।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে এই অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। বিশেষ করে গণপরিবহনে চালক এবং তার সহকারী, যাত্রীদের মাস্ক পরায় দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব। কোনো বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকলে জরিমানা করা হচ্ছে। নিয়মিত চলবে এই অভিযান।

এর আগে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রথম দিন শনিবার (১৫ জানুয়ারি) আদালত-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছিলেন আপাতত গণপরিবহনে স্বাস্থবিধি এবং কাগজপত্রের বিষয়টি তারা দেখছে। পরবর্তীতে নির্দেশনা পেলে বাসচালক-হেলপারদের করোনা সনদ আছে কী না তা নিয়ে তদারকি করবেন।

অতিরিক্ত যাত্রী বহনে নিয়ম ভাঙার কারণ হিসেবে একে-অপরকে দোষ দিচ্ছেন যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা। গাজীপুর পরিবহনের চালকের এক সহকারী বলেন, পথে পথে যে পরিমাণ মানুষ, যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে যান, বাধা দিলেও শোনেন না। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। অন্যদিকে যাত্রীরা বলছেন, গাড়িতে আসনের সমপরিমাণ যাত্রী ওঠার পরও বিভিন্ন জায়গাতে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছে বাসের হেলপাররা।

মহাখালী রেলগেট এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রী কামাল উদ্দিন। সরকারি অফিসে চাকরি করেন। নির্দিষ্ট সময়ে তাকে অফিসে যেতে হবে। তিনি বলেন, “প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে চাচ্ছি না। এখন মনে হচ্ছে বাধ্য হয়েই যেতে হবে।”

দিনে অভিযান ও কড়াকড়ি নজরদারি, অন্যদিকে রাতে অনেকটাই শিথিল এমন প্রশ্নের জবাবে রমনা জোনের পুলিশ সার্জেন্ট আনিসুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বেশিরভাগ লোকজন দিনের সময়টাতে যাতায়াত করে এবং রাতে কম চলাচল করে। সে কারণে রাতে অভিযান ঢিলেঢালা থাকে। আর দিনের সময়টাতে আমাদের ট্রাফিকের দিকে একটু বেশি মনযোগ দিতে হয়।” 

তিনি আরও বলেন, “রাতে আমাদের স্বল্প পরিসরে অভিযান থাকে এবং সেটি সিগন্যাল কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অভিযানের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বা আশপাশে নজরদারি করা সম্ভব হয় না। আর গণপরিবহনে বাসচালক-হেলপার মাস্কবিহীন এবং করোনা টিকা সনদ না থাকা ও গাড়ির কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।”

দেশে গেল কয়েকদিনে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ১৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এভাবে সংক্রমণ বাড়লে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে জায়গা হবে না।”

 এ নিয়ে সরকারও চিন্তিত ও আতঙ্কিত বলে জানান তিনি।

এর আগে মাস্ক না পরলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে এবং জেল পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪০৭ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে। করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪ জনে।

Link copied!