নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ইস্যুতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দেখতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে এমন প্রস্তাব দিয়েছে দলটির নেতারা।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।
জিএম কাদের বলেন, “সংলাপে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে জাতীয় পার্টি তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে চার-পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছেন তারা।”
খুব আন্তরিক পরিবেশে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, “আমাদের প্রধান প্রস্তাব একটিই। সেটি হলো সংবিধানে ইসি নিয়ে যা বলা আছে সেটার বাস্তবায়ন। রাষ্ট্রপতিকে আমরা বলেছি, ইসি গঠনে আইনটি করা জরুরি। আমরা বলেছি, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠন করতে হবে যারা যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য। সে রকম লোক নিয়ে ইসি গঠন করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে আমরা আশা করছি। ইসি গঠন করলেই হবে না। তাদের কর্তৃত্ব দিতে হবে।”
জাপার এই নেতা আরও বলেন, “এ সময়ের মধ্যে ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন সম্ভব। কিন্তু সরকার তা মনে করছে না। এজন্য আমরা বলেছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনগুলো বলবৎ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এগুলো তিনি ভেবে দেখবেন।”
জাপার তিন প্রস্তাবে বলা হয়েছে-
ক. সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। এখানে অনুচ্ছেদ ১১৮( ১ )-এ উল্লেখ আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনও আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।
সংবিধানে আইনের দ্বারা নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও অদ্যাবধি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কোনও আইন প্রণীত হয়নি। আমরা মনে করি, আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসরণে একটি আইন করা দরকার। আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন এবং সে অনুযায়ী যোগ্য ও মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা।
খ. সংবিধানের সপ্তম ভাগ, নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’
কীভাবে এটি প্রযোজ্য হবে বা কার্যকর করা যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকা আবশ্যক। সে কারণে এ বিষয়ে একটি আইন থাকা প্রয়োজন। যে আইনে, দায়িত্ব পালন না করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে ও কী ধরনের শাস্তি হবে তা সুস্পষ্টভাবে বলা থাকবে।
গ. সময় স্বল্পতার কারণে যদি সংসদে আইনসমূহ প্রণয়ন সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনগুলো বলবৎ করতে পারেন। যদি কোনও কারণে ওই অধ্যাদেশ করা সম্ভব না হয় এবং আগের মতো সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাপার পক্ষ হতে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণের নাম (প্রস্তাবনাপত্রে নাম উল্লেখ করেননি জাপা) প্রস্তাব করা হলো।
যদি সার্চ কমিটি গঠন না করে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির পক্ষ হতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করার জন্য নিম্নবর্ণিত একজনের নাম (প্রস্তাবনাপত্রে নাম উল্লেখ করেননি জাপা) সুপারিশ করা হলো।
এর আগে আলোচনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে এমন উদ্যোগ নেওয়ায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জি এম কাদের।
এদিকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন- সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কোচেয়ারম্যান রুহুল আমীন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান।