• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আরাভের ছদ্মনামের ছড়াছড়ি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম
আরাভের ছদ্মনামের ছড়াছড়ি

আরাভ খান, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নাম। সম্প্রতি দুবাইয়ে তারকাদের নিয়ে বড় পরিসরে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন তিনি। আর এর মাধ্যমে অল্প সময়েই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে নানা রকম সংবাদ প্রচার হয়েছে। এতে তার জন্মস্থান থেকে শুরু করে কর্মজীবনসহ নানা কিছু উঠে এসেছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য বের হয়েছে তার সম্পদ নিয়ে।

অল্প সময়ে আরাভ কীভাবে এতো টাকার মালিক হয়েছেন তা নিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ শুরু হয়েছে। তবে, তার নাম নিয়ে চলছে বিভ্রান্তি। বিভিন্ন সময়ে নাম পরিবর্তন করে অপরাধসহ সুবিধা ভোগ করেছেন বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকটি দেশের পাসপোর্টও করেছেন আরাভ। তার নামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আরাভ খান, আপন আরাভ, সোহাগ মোল্লা, আপন, রবিউল ইসলাম রবি, রাশেদুল ইসলাম, আপন মোল্লা, হৃদি শেখ ও হৃদয়। এই নামগুলোর মধ্যে ‘রবিউল ইসলাম আপন’ ও ডাক নাম ‘সোহাগ মোল্লা’ প্রকৃত বলে জানিয়েছেন তার গ্রামের বাড়ির লোকজন।  

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে এসব নামের তথ্য পাওয়া যায়।  

জানা গেছে, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্যের হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম আপনই দুবাইয়ের ‘আরাভ খান’। সেখানে তার স্বর্ণ ব্যবসা ও কোটিপতি বনে যাওয়ার খবরটি বর্তমানে আলোচনার তুঙ্গে। এ নিয়ে তার নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়ায়তেও চলছে নানা গুঞ্জন। যদিও এলাকার মানুষ তাকে চেনেন রবিউল ও আপন নামে।

এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীরা জানান, শুধুমাত্র জুয়ার টাকা যোগানোর জন্য রবিউল ইসলাম আপন এলাকায় নানা অপকর্ম করতেন। গ্রামের মানুষের হাস-মুরগি ও নিজের বাবার ধরে আনা মাছ চুরি করে বিক্রি করে দিতেন বাজারে। সেই টাকা দিয়ে খেলতেন জুয়া। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে আপনকে গ্রাম ছাড়াতে বাধ্য করেছিলেন গ্রামবাসী। পরে ঢাকায় গিয়ে ধনীর ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে চুরি করতেন তাদের বাইক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে জন্ম হয় রবিউল ইসলাম আপনের। তার বাবার নাম মতিউর মোল্লা। তার বাবা খুলনায় ভাঙারি মালামাল ফেরি করতেন। জীবিকার তাগিদে একদিন কোটালীপাড়া চলে আসেন। বিলের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। পরে সেখানে জমি কিনে বাড়ি করেন। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় রবিউল ইসলাম আপনকে পাঠিয়ে দেন আদি বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারীতে। সেখানে এস এম মডেল স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করার পর আপনকে কোটালীপাড়ায় নিয়ে আসেন তার পরিবার। সহযোগিতা করেন বাবার সঙ্গে বিলে মাছ ধরার কাজে।

একসময় আপন জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। বিল থেকে বাবার ধরে আনা মাছ চুরি করে বাজারে বিক্রি করে দিতেন। তার হাত থেকে রক্ষা পেত না এলাকাবাসীর হাস মুরগিও। এ নিয়ে এলাকায় কয়েকবার শালিস বিচার বসে। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা মতিউর মোল্লাকে চাপ দিয়ে আপনকে গ্রাম ছাড়াতে বাধ্য করেছিলেন গ্রামবাসী।

গ্রাম ছাড়ার দুই বছর পর একবার এসেছিলেন রবিউল ইসলাম আপন। তখন আর দু-চারজনের মতো স্বাভাবিক ছিলেন আপন। এক যুগ পরে গণমাধ্যমে আপনকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে আলোচনা শুরু হয় এলাকাবাসীর মধ্যে।

এ বিষয়ে আপনের এক প্রতিবেশী হায়দার রহমান বলেন, “আপন সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করার পর জন্মস্থান কোটালীপাড়ায় চলে আসেন। এখানে এসে আর তিনি কোনো স্কুলে ভর্তি হননি। আশুতিয়া গ্রামে এসে তার বাবা কে মাছ ধরায় সহযোগিতা করতেন। একসময় তিনি জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। জুয়ার টাকা যোগানোর জন্য সে প্রতিবেশীদের বাড়িতে চুরি করতেন। বিভিন্ন শালিসে একাধিকবার বিচার হলেও শোধরাননি। একপর্যায়ে তাকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করা হয়।”

স্থানীয় সমাজকর্মী এম আরমান খান জয় বলেন, “আরাভ খানকে আমরা আপন চিটার নামেই জানতাম। আরাভ আমাদের পাশের গ্রামের ছেলে। আজ থেকে দশ বছর আগে একবার আমার খালাতো ভাই আরাভের একটি ছবি দিয়ে বলেন এই লোক ঢাকা থেকে একটি লেটেস্ট মডেলের বাইক চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে। পরে আমরা আশুতিয়া গ্রামে খোঁজ নেই। কিছুদিন পরে জানতে পারি আপন বাড়িতে আসছেন। পরের দিন ভোর রাতে গিয়ে আপন ওরফে আরাভকে হাতেনাতে ধরি। আপনকে ধরার পর সে আমাদের হাত পা ধরে ক্ষমা চায়। পরে আমরা বাইকটা উদ্ধার করে আপনকে ছেড়ে দেই।”

কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলেন, “প্রায় এক যুগ আগে আপন একবার বাড়ি এসেছিলেন। এরপর তাকে গ্রামে আর দেখা যায়নি। তাই তার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। তবে কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখে আমরা এলাকাবাসী অবাক হই। বিদেশে গিয়ে নাম বদলে আরাভ খান হলেও আমরা তাকে দেখে চিনে ফেলি। আরাভ মতিউর জেলের ছেলে রবিউর ইসলাম আপন মোল্লা।”

Link copied!