• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করেছে বিএনপি। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির ন্যায় সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগও। এভাবে আগামী ডিসেম্বর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলবে।

জানা গেছে, রাজধানী ও মহানগরকেন্দ্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু কিছু জেলায় সংঘর্ষ এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এতে ইউনিয়ন পর্যায়ের এই দুই দলের কর্মসূচিতে নেতাদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী উল্লেখ করেছেন দলের জেষ্ঠ্য নেতারা। 
তারা বলছেন, “আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে একটা অঘটন সৃষ্টির আশায় বিএনপি গায়ে পড়ে এসব করছে।

এরআগে শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ আর বি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াত বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের রিরুদ্ধে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। সেখানে তিনি বলেন, “দুর্নীতিবাজ জিয়া পরিবারের কাছে দেশ ও গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। এ দেশের লুন্ঠিত গণতন্ত্রকে শেখ হাসিনা আন্দোলন সংগ্রাম করে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যারা মাগুরা মার্কা নির্বাচন করে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল তারাই আজ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের কথা বলে, এটা হাস্যকর।”

আবদুস সবুর বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা, সমৃদ্ধি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছেই নিরাপদ। আগামী নির্বাচনে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনা সরকারকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। কোনো অপশক্তিই এ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।”

একইদিন বিকালে রাজশাহীর কাটাখালী বাজারে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করে মেহেরপুর আওয়ামী লীগ।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ, রংপুর নগরীর বঙ্গবন্ধু চত্বরে শান্তি সমাবেশ করে মহানগর আওয়ামী লীগ। খুলনায় শান্তি সমাবেশ করেছে মহানগর যুবলীগ। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জে, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব কর্মসূচি থেকে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য প্রতিহতে সজাগ ও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান স্থানীয় নেতারা। তবে সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তির জানান দিতে জেলা সদরে একযোগে পদযাত্রা কর্মসূচি দিলেও অনেক স্থানে করতে পারেনি বিএনপি।

পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীর বাধায় অন্তত ছয় জেলায় কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে। এ সময় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩১ জন। কর্মসূচি থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১০৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।

এর মধ্যে নীলফামারীতে বিএনপির মঞ্চ দখল করে ভাঙচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে উল্লাসের অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পদযাত্রার সময় অসুস্থ হয়ে উপজেলা সভাপতি আব্দুল জব্বার মারা গেছেন। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ ১০ দফা দাবির অংশ হিসেবে ৬৬টি সাংগঠনিক জেলা সদরে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

শনিবার ঝালকাঠির আমতলা সড়কের কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রায় বাধা দিলে বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে ওসি (অপারেশন) ফিরোজ কামাল, এসআই নজরুল, শফিকুলসহ পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন।

এদিকে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার নবাবগঞ্জ উপজেলায় জেলা বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার, তাই দেশের মানুষ তাদের আর গ্রহণ করবে না। দেশের মানুষ সংকটময় সময় পার করছে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।”

ফখরুল বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে তারা। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশে যে অর্থনীতির সংকট চলছে, এটা শুধু যে বিএনপির সংকট তা নয়, এটি জাতীয় সংকট। এ সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।”

এদিকে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পাল্টা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগও একই দিন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন থেকে ক্ষমতাসীনরা রাজপথে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। তখন থেকেই পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটিগুলোকে কর্মসূচির বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক জেলার ইউনিয়ন পর্যায়েও শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে সরকারি দলটি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, “আমরা তো চাচ্ছি শান্তিপূর্ণভাবে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। সুতরাং আমরা কোনো কনসান্টেশনে যেতে চাচ্ছি না। আমরা বিভিন্ন সময়ে আমাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম দেওয়া আছে, কারণ আগামী এপ্রিল থেকে তো রোজা শুরু হয়ে যাবে। আমাদের অনেক আগে থেকেই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই প্রোগ্রাম দেওয়া আছে। বিএনপি গায়ে পড়ে যদি ঝগড়া করতে চায় তাহলে তো একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে, সেই কারণে আমরা খুব হুঁশিয়ার। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা বলতে পারি যে, আমরা কোনো সংঘর্ষ চাই না।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি সারা দেশব্যাপী যে পদযাত্রা করছে সেখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই তাদের কোনো আন্দোলনই সফল হবে না। তারা শুধু জানে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা,অগ্নি সন্ত্রাস করা। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ আছে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছি। ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। আমরা যে উন্নয়ন করেছি নির্বাচনকে সামনে রেখে তা নিয়ে দেশের মানুষের কাছে যাচ্ছি। তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকবে। আমাদের কর্মসূচিও চলছে। এগুলো নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “আমরা চাই আগামী জাতীয় নির্বাচন শক্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক। নির্বাচনে একটা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আমরা। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে একটা নির্বাচন হবে। আমরা চাই সেটা শক্ত একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আপনারা ম্যান্ডেট দিন। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।”

Link copied!