• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে যা ভাবছে আ.লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৯:৫৫ পিএম
দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে যা ভাবছে আ.লীগ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে আবারও বিজয় চায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে সংবিধানের বাইরে আপাতত কিছুই ভাবছে না দলটি। একইসঙ্গে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি-আন্দোলনেও খুব বেশি পাত্তা দিচ্ছে না হাইকমাণ্ড। একইকথা বলছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও ।

নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের গতিবিধি আরও কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। একই সঙ্গে তাদের পালটা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো লাভবান হবে। আর অংশ না নিলে বিলিনের পথে হাটবে সরকারবিরোধী দলগুলো।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে সরকারের চলমান সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতৃত্বাধীন সমমনা দলগুলোর ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতি, অব্যাহত সন্ত্রাস এবং ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের বিষয়ে আরও সর্তক থাকবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও দ্বাদশ নির্বাচনে বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো প্রভাব যেন না থাকে সে বিষয়টিও কৌশলে মোকাবিলা করছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান মেনেই অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব বলে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং মাঠের আন্দোলনে বিরোধীদের মোকাবিলাও করছে দলটি।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে লাগাতার বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও বর্জন করে আসছেন তারা। সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ৯ দফা দাবিতে গত ডিসেম্বর থেকে অনেকটা লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ এই হুমকি এখনো পর্যন্ত খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু নির্বাচনের বাধা সৃষ্টি করলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। এ কারণে তারা চায় বিএনপিসহ সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সেক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান ধারা ও বিধি মেনে তাদের যত ধরনের সুবিধা দেওয়া যায় দেওয়া হবে। তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার সুযোগ থাকলে তাও মানা হবে। কিন্তু সংবিধান থেকে তারা এক চুলও নড়বে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “আমরা চাই বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনীতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ গ্রহন করুক। তবে বিএনপি যেসব দাবি করছে, এগুলো অবান্তর, অযৌক্তিক। তারা আসলে উদ্ভ্রান্তের মতো পথ চলছে। সংবিধান মেনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের সবাই চায় আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। আমরাও চাই নির্বাচনে বিএনপিসহ সবাই অংশ নেবে। আমাদের দলের সভানেত্রীও একাধিক আলোচনা সভায় বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের (বিএনপি) নির্বাচনে আসতে হলে সংবিধান মেনেই আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান মেনে তাদের যতটা ছাড় দেওয়া যায়, সেটা দেওয়া হবে। সংবিধানের মধ্যে থাকলে দাবিও মানা হবে। কিন্তু সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”

এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। আন্দোলন বা হুমকি-ধমকি দিয়েও কোনো লাভ হবে না। তবে ভোটের আগে বিদেশি প্রভাব মোকাবিলাতেও কৌশলী ভূমিকায় আওয়ামী লীগ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশ ও সংস্থাগুলোকেও সংবিধানের ভেতরে থেকেই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে আশ্বাস দিচ্ছেন তারা। সংবিধানের বাইরে গেলে বা অনির্বাচিত সরকার এলে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়-সে বিষয়ে অতীতের অভিজ্ঞতার কথাও জানাচ্ছেন। অতীতে জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে ‘বিএনপির সহিংস’ কর্মকাণ্ডও তুলে ধরছে দলটি। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ে সরকারের ভূমিকা কী হবে এবং কর্তৃত্ব কেমন হবে সে বিষয়গুলোও আন্তর্জাতিক মহলকে অবহিত করা হচ্ছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “আমরা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন। আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ হবে এবং নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিএনপিই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। এখন তারাই আবার সেই অসাংবিধানিক দাবি করছে। বাংলাদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। দেশের জনগণও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। বিএনপি এখন আবার ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। এর জবাব তাদের জনগণই দেবে।”

Link copied!