রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে বক্স গার্ডার ছিটকে প্রাইভেট কারকে চাপা দেওয়ার সময় সেটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী। বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ক্রেনচালক আল আমিন।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানিয়েছে, চালকের সহকারীরর নাম রাকিব হোসেন (২৩)। তার ক্রেন চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।
খন্দকার আল মঈন বলেন, “ক্রেনের মূল চালক ছিলেন আল আমিন। তার হালকা যানের লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানের লাইসেন্স ছিল না। এ ছাড়া ঘটনার দিন ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন আল আমিনের সহকারী রাকিব হোসেন। সে সময় আল আমিন বাইরে থেকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন।”
এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. আল আমিন হোসেন হৃদয় (২৫), সহকারী রাকিব হোসেন (২৩), দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান মো. রুবেল (২৮), মো. আফরোজ মিয়া (৫০), ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ (৩৯), হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফকন বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইফতেখার হোসেন (৩৯), হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু (৪৫), ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন তুষার (৪২), প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা (৩৩) ও মো. মঞ্জুর ইসলাম (২৯)।
রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, কালশী, সাভার এবং গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুর্ঘটনার দিন দুপুর ২টায় আল আমিন ও রাকিব ক্রেন চালানো শুরু করেন। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে দ্বিতীয় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলন করতে গেলে ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। তখন ক্রেনে থাকা গার্ডারটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। দুর্ঘটনার পর অপারেটর আল আমিন ও হেলপার রাকিব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
খন্দকার আল মঈন আরও জানান, ইফকন কোম্পানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি থেকে ভারি যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পায়। গার্ডার বহনের ক্রেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট না থাকায় বিল্ড ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান থেকে অপারেটর ও হেলপারসহ ওই ক্রেনটি মাসিক চুক্তিতে ভাড়া নেয়। ইফকনের স্বত্বাধিকারী গ্রেপ্তার ইফতেখার ও হেড অব অপারেশন মিঠু অপারেটরদের দক্ষতা ও যোগ্যতা ও ক্রেনের ফিটনেস যাচাই না করেই গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সড়কে ভারি গার্ডার স্থাপনের কাজে নিয়োজিত করেন। এছাড়াও গার্ডার স্থাপনের সময় অতিরিক্ত একটি সহায়ক ক্রেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না।
আরও পড়ুন : গার্ডার দুর্ঘটনায় ক্রেনচালকসহ ৯ জন গ্রেপ্তার
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উত্তরার জসীম উদ্দীন রোডের মোড়ে বিপণিবিতান আড়ংয়ের সামনে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কংক্রিটের বিশাল গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় চলন্ত একটি গাড়ির ওপর ছিটকে পড়ে। গার্ডারটি গাড়ির ওপর এমনভাবে পড়ে যে তার নিচে আসলে কয়জন চাপা পড়েছেন, সেটা কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, গাড়িটিতে মোট ৭ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন নিহত হন। বেঁচে যাওয়া দুজন হলেন নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। হৃদয়-রিয়া মনির বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরছিলেন সবাই।
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় নিহত ঝরনা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাদী হয়ে মামলা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :