• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দিনে চাকরি, রাতে ডাকাতি করতো তারা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২২, ০৬:৩৭ পিএম
দিনে চাকরি, রাতে ডাকাতি করতো তারা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকা থেকে মহাসড়কে ২৫ হাজার ডিমবাহী একটি পিকআপ ভ্যানে ডাকাতির সময় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা ও র‍্যাব-১১।

র‍্যাব জানায়, ডাকাত দলের সদস্যরা দিনের বেলায় বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত থাকলেও রাতের বেলা পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা যাত্রীবাহী বাস দিয়ে ট্রাক-পিকআপ আটকে এক বছরে অন্তত ৬-৭ বার ডাকাতি করেছে। 

শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তাররা হলেন— ডাকাত চক্রের সরদার মূসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০) ও মামুন (২৪) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি চাপাতি, দুইটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস জব্দ করা হয়। এছাড়া ডাকাতির শিকার দুইজন ভিকটিমসহ লুটকৃত পণ্যবাহী বাস জব্দ করা হয়।

চক্রটি যেভাবে কাজ করে

চক্রটি মূলত ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করতো জানিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করে ডাকাতিতে অংশ নেয়। তৃতীয় দলটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়। এছাড়া পণ্যবাহী গাড়িটি পরে রং পাল্টে সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়, অথবা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দেয়।”

যেভাবে ডাকাতি ও ধরা পড়ল তারা

খন্দকার আল মঈন বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় একটি ডিমবোঝাই পিকআপের গতি রোধ করে র‌্যাব। পিকআপ থেকে পালানোর সময় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে তারা দুজন একটি বাস চালিয়ে পিকআপের পিছু নেয়। একপর্যায়ে পিকআপটির সামনের রাস্তা আটকে চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পিকআপটির নিয়ন্ত্রণে নেয়। চালক ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে বাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর ডাকাত দলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপের চালক ও হেলপারকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়। পরে ডাকাতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বাসটি জব্দ করা হয়। এ সময় বাস থেকে ডাকাতদলের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করাসহ উদ্ধার করা হয় পিকআপের চালক ও সহকারীকে। এ সময় বাসের জানালা ভেঙে ৪/৫ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।”

গ্রেপ্তারদের বিষয়ে যা বলছে র‌্যাব

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “গ্রেপ্তার মূসা ১০-১২ বছর ধরে মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। মূসাসহ দলের সবার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার ডাকাতিতে জড়িত হয়।” তিনি আরো বলেন, “১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করছিল। তারা পেশায় কেউ পোশাকশ্রমিক, চালক, চালকের সহযোগী, আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে তারা ডাকাতিতে অংশ নেয়।”

গ্রেপ্তাররা যে যে পেশায় নিয়োজিত

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, মূসার প্রধান সহযোগী গ্রেপ্তার শামিম। সে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসের চালক। এর আগে সে স্ত্রী হত্যার দায়ে সাত বছর কারাভোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার রনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালকের সহকারী। গ্রেপ্তার নাঈম পেশায় গাড়িচালক। মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কার্টিং মাস্টারের কাজ করে। গ্রেপ্তার আবু সুফিয়ান অন্য কোনো পেশায় আছে কি না, জানা যায়নি।

Link copied!